Sunday, July 27, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়শেষ প্রশ্ন ছিল— “মা, আমার বোনেরা কেমন আছে?” | বিদায় আয়মান, ছোট্ট...

শেষ প্রশ্ন ছিল— “মা, আমার বোনেরা কেমন আছে?” | বিদায় আয়মান, ছোট্ট এক সাহসী হৃদয়

ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত শিশু আয়মান (১০) আর বেঁচে ফিরতে পারেনি। আগুনে দগ্ধ শরীরে চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে শুক্রবার ভোরে সে না–ফেরার দেশে চলে গেছে। মৃত্যুশয্যায় আয়মানের শেষ কথা ছিল— “মা, আমার বোনেরা কেমন আছে?”— যা আজও শোকের ভার বাড়িয়ে দিয়েছে তার পরিবারের হৃদয়ে।

আয়মানের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। বাবা বাপ্পি হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছিলেন। মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আয়মান ছিল পরিবারের সবার আদরের। সবার মুখে হাসি ফোটাত সে।

ঘটনার দিন ক্লাস শেষে স্কুলের খেলার মাঠে দোলনায় দোল খাচ্ছিল আয়মান। হঠাৎ বিকট শব্দে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দগ্ধ অবস্থায় সাহস করে এক শিক্ষিকার মোবাইল ফোনে সে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের অবস্থার কথা জানায়।

প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চারদিন নিবিড় পরিচর্যায় রাখার পর শুক্রবার ভোরে সে মৃত্যুবরণ করে।

আয়মানের ছোট মামা মোহাম্মদ শামীম জানান, তার মৃত্যু সংবাদে গোটা এলাকা নেমে আসে শোকের ছায়া। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মামি সাফিয়া বলেন, “ও বাসায় এলেই জড়িয়ে ধরত, খুব মিষ্টি করে কথা বলত। ১৫ দিন আগে যখন বাসা ছাড়ল, ও আমার কাছে থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু মেহমান থাকায় রাখতে পারিনি। বোনদের অসম্ভব ভালোবাসত। শরীর পোড়া অবস্থায়ও মায়ের কাছে জানতে চাইতো— ‘আমার বোনেরা কেমন আছে?’”

প্রতিবেশী আলিফা জানান, “আয়মান সবার প্রিয় ছিল। ওর এই অকাল মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছে না। এমন বেদনা যেন আর কারও ভাগ্যে না আসে।”

আরেক প্রতিবেশী নূরজাহান বেগম বলেন, “ছুটিতে গ্রামে এলেই পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে আনন্দের ছোঁয়া লাগত। পাড়ায় ছুটে বেড়াত। আজ তাকে লাশ দেখে মনে হচ্ছে বুকটাই চিরে গেছে।”

ভেদরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। আয়মানের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তার পরিবারের পাশে থাকবে।”

এই সাহসী ছোট্ট প্রাণটির অসময়ে চলে যাওয়া শুধু তার পরিবারের নয়, গোটা জাতির হৃদয়ে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করে গেল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments