শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় পদ্মা নদীর স্রোত দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ৮৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। তবে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মাত্র ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধীরগতির কারণে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে এলাকার বসতভিটা ও ফসলি জমি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নাওডোবা, উকুল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এবং আশপাশের গ্রামের মানুষ। কেউ আগেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ আবার সব হারিয়ে দিশেহারা।
স্থানীয় সূত্র ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পদ্মাসেতু প্রকল্পের আওতায় ২০১০-১১ অর্থবছরে মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হয়, যার ব্যয় ছিল ১১০ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছর থেকে ওই রক্ষাবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এক পর্যায়ে বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার নদীতে বিলীন হলে তাৎক্ষণিক সংস্কার শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হয়।
তবে এতেও থামেনি নদীর আগ্রাসন। ঈদের পর থেকে সাতবার ভাঙনের কবলে পড়ে বাঁধের নতুন অংশ। সর্বশেষ, গতকাল রাতে নাওডোবা ইউনিয়নের অন্তত ২৫০ মিটার এবং ডানতীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় উকুল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এলাকার আরও ১৫০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে বহু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সব নদীতে ভাইঙা নিয়া গেলো। কিছুই সরাইতে পারি নাই। এখন কোথায় যামু?”
স্থানীয় বাসিন্দা আসিক বলেন, “বেরিবাঁধ চাইছিলাম যাতে জায়গাজমি রক্ষা পাই। প্রকল্প তো শুরু হইছে, কিন্তু আমাগো এলাকায় কাজই করে নাই। সব নদীতে তলাইয়া গেলো।”
আয়নাল মাদবর জানান, “পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আগেই জানিয়েছিলাম। আইসা দেখছে ঠিকই, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই। এখন সব হারালাম।”