চিনি—স্বাদে মিষ্টি হলেও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে একে বলা হয় ‘হোয়াইট পয়জন’ বা সাদা বিষ। আধুনিক খাদ্যাভ্যাসে পরিমিতি জ্ঞান হারিয়ে আমরা যেভাবে চিনিকে গ্রহণ করছি, তাতে এটি ধীরে ধীরে নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে প্রসেসড সুগার বা পরিশোধিত চিনি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
চিনি মূলত সরাসরি কোনো পুষ্টি উপাদান দেয় না। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ—কোনো কিছুই নেই। অথচ এতে থাকা অতিরিক্ত গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ শরীরে গিয়ে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া চিনি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, লিভার সমস্যা এমনকি ক্যানসারের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের মধ্যে এটি দাঁতের ক্ষয় এবং অতি চঞ্চলতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) পরামর্শ দিয়েছে, দৈনিক মোট ক্যালোরির ৫ শতাংশের বেশি চিনি গ্রহণ করা উচিত নয়। অথচ আমরা প্রতিনিয়ত কোমল পানীয়, মিষ্টান্ন, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চায়ের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে চিনি গ্রহণ করছি। এটি কেবল শরীর নয়, মস্তিষ্কেও আসক্তি তৈরি করে, ঠিক মাদকের মতো।
চিনির বিকল্প হিসেবে অনেকে গুড়, খেজুরের চিনি বা প্রাকৃতিক মিষ্টি উপাদান যেমন মধু বেছে নিচ্ছেন। তবে সেগুলোরও সীমিত ব্যবহার জরুরি। সুস্থ থাকতে হলে খাদ্যতালিকায় চিনির ব্যবহার কমিয়ে ফলমূল, শাকসবজি ও পূর্ণশস্য গ্রহণে মনোযোগী হওয়া উচিত।
অতএব, চিনিকে শুধু মিষ্টি নয়—স্বাস্থ্যহানিকর এক ‘হোয়াইট পয়জন’ হিসেবে দেখার সময় এখনই। সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই আমরা এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি।