মাদারীপুরের সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের দুর্গম চর হোগল পাতিয়া গ্রামে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় চারটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলার পাশাপাশি বিস্ফোরণ ঘটায় বেশ কয়েকটি হাতবোমা। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সদর থানা পুলিশ। এর আগের দিন শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে।
চরাঞ্চলটি একেবারেই দুর্গম হওয়ায় এলাকাবাসী সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। নদীপথ ও কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে সেখানে পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে, যা এই অঞ্চলকে সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত করেছে। ফলে প্রায়ই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হওয়ায় প্রতিরাতে প্রায় ১০ লাখ টাকার অবৈধ বালু উত্তোলন করা হয়। এই বালু ব্যবসার পেছনে রয়েছেন ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম আবুল। তার নেতৃত্বেই চলছে এই কার্যক্রম। এর ফলে আড়িয়াল খাঁ নদে ভাঙনও দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়রা বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান আবুলের নেতৃত্বে শামিম আকন, মিরাজ আকনসহ ৭০-৮০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়। তারা আক্তার বেপারী, গিয়াস বেপারী ও জলিল বেপারীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট এবং প্রায় ৫০টির মতো হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। লুট হওয়া মালামালের মধ্যে ছিল নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রী।
ক্ষতিগ্রস্ত আক্তার বেপারী বলেন, “রাতে হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। দরজা-জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সব কিছু লুটে নেয়। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই, প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।”
একজন নারী বাসিন্দা জানান, “প্রথমে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, পরে পুরুষরা পালিয়ে গেলে লুটপাট চালায়। প্রতিদিনই নদী থেকে তারা অবৈধভাবে বালু তুলছে।”
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আবুলের বক্তব্য জানতে গেলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি এবং তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তদন্ত চলছে, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।