রাজধানীর গুলশানে গত শনিবার সন্ধ্যায় একটি আলোচিত ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। চাঁদাবাজির অভিযোগে একজন সাবেক মহিলা এমপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের সময় চারজনসহ হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পরপরই সংশ্লিষ্ট সংগঠন থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এই ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে, যার ঢেউ গিয়ে লাগে তার নিজ এলাকা নোয়াখালীতেও। সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিয়াদের আচমকা বদলে যাওয়া জীবনধারায় অবাক হয়েছেন তার এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, রিয়াদের দাদা ওয়ালীউল্যাহ এবং বাবা আবু রায়হান দুজনেই ছিলেন রিকশাচালক। আবু রায়হান পরে দিনমজুরের কাজ করলেও পরিবারের উপার্জনের বেশিরভাগই দৈনিক খাটাখাটনির ফল। তাদের সংসার চলত কঠিন সংগ্রামে।
এই কষ্টের ভেতর থেকেই বাবা-মা ছেলেকে শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতেন। রিয়াদ নবীপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার পর ভর্তি হন কোম্পানীগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজে। সেখানেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার মাধ্যমে দলীয় রাজনীতিতে পা রাখেন।
পরে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় গিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং কোটা আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকে “সমন্বয়ক” পদে দেখা যায়। ওই পরিচয়ে ধীরে ধীরে চাঁদাবাজি ও বিত্তবৈভবের জগতে প্রবেশ করেন তিনি।
তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আগের জরাজীর্ণ পরিবেশ অনেকটাই বদলে গেছে। পুরনো ঘরের পাশে নির্মিত হচ্ছে পাকা দোতলা ঘর, রয়েছে দামি গাড়িও।
তার মা নাজমুন নাহার বলেন, “আমরা না খেয়ে ওকে শহরে পড়তে পাঠাইছিলাম। টিভিতে দেখি পুলিশ ওকে ধরেছে। শুনেছি সে চাঁদাবাজি করেছে! এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারি না। কেউ ওর নামে ষড়যন্ত্র করছে।”
পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, “যে পরিবার একসময় দিনে এনে দিনে খেত, তারা এখন পাকা বাড়ি করছে, দামি গাড়িতে চড়ে—এই বদল দেখে আমরা হতবাক।”