সম্প্রতি দেশীয় খ্যাতনামা শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। জনপ্রিয় চাকরি খোঁজার প্ল্যাটফর্ম BD Jobs-এ “MTO (Management Trainee Officer)” পদের জন্য প্রকাশিত এই সার্কুলারে প্রার্থীদের জন্য কিছু অতিরিক্ত শর্ত (Additional Requirements) উল্লেখ করা হয়, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, প্রার্থীদের উচ্চতা ন্যূনতম ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, ওজন ৫৬-৭০ কেজি এবং ধর্মীয় পরিচয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রার্থীদের অবশ্যই কোরআন তেলাওয়াত জানতে হবে।
এই শর্তগুলোর মধ্যে কয়েকটি চাকরির প্রাসঙ্গিকতার বাইরে চলে গেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সমালোচকদের ভাষ্য অনুযায়ী, MTO হলো একটি এক্সিকিউটিভ গ্রেডের পেশাদার পদ, যেখানে প্রার্থী নির্বাচন করা উচিত তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিশ্লেষণী দক্ষতা, নেতৃত্বগুণ এবং পেশাদারিত্ব যাচাই করে। সেখানে উচ্চতা ও ওজনের মতো শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে শর্ত হিসেবে রাখা একধরনের বৈষম্য তৈরি করে, যা মেধার ভিত্তিতে মূল্যায়নের নীতির পরিপন্থী।
অন্যদিকে, ধর্মীয় শর্ত আরোপ করে শুধুমাত্র মুসলিম প্রার্থীদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। কোরআন তেলাওয়াত জানা থাকা নিঃসন্দেহে একটি ভালো ধর্মীয় গুণ, তবে তা একটি কর্পোরেট পদে আবশ্যকতা হিসেবে আরোপ করা হলে তা ধর্মীয় অবমাননার পাশাপাশি অসাংবিধানিক আচরণ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। কারণ সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্বীকৃত কোম্পানি ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করতে পারে না।
সমালোচকরা আরও বলেন, একটি কর্পোরেট জবের বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের শর্ত শুধু অসাংবিধানিকই নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের পেশাদার ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর ফলে, কোম্পানির বিরুদ্ধে নেতিবাচক ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি হয় এবং মেধাবী প্রার্থীরা নিরুৎসাহিত হন আবেদন করতে।
এই ঘটনার মাধ্যমে একটি বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানের এইচআর সংস্কৃতি এখনও কতটা পেশাদার ও মানসম্পন্ন? চাকরির বিজ্ঞপ্তি তৈরির সময় কতটা সংবেদনশীলতা, আইনগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাম্যবাদের চেতনা বজায় রাখা হচ্ছে?
সামগ্রিকভাবে, আকিজ গ্রুপের এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি একটি উদাহরণ হয়ে রইল—যেখানে অপ্রাসঙ্গিক ও বিভাজনমূলক শর্ত একটি বড় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। তাই ভবিষ্যতে সব প্রতিষ্ঠানকে উচিত হবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরির ক্ষেত্রে মানবাধিকার, সংবিধান, চাকরির প্রাসঙ্গিকতা এবং সমতা-এই চারটি দিক বিবেচনায় রাখা। তাহলেই দেশের চাকরির বাজার আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠবে