সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং তার ছোট ভাই মাহবুব আলম মাহি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে উভয়ে ফেসবুকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন।
‘নি আমিন’ নামের এক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট দাবি করেন, মাহফুজ আলমের ভাইয়ের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের লেনদেনকে কেন্দ্র করে AUSTRAC (অস্ট্রেলিয়ান ট্রানজেকশন রিপোর্টস অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টার) একটি তদন্ত শুরু করেছে। তার অভিযোগ, এই অর্থ মূলত কিছু রাষ্ট্রীয় প্রকল্পে লবিং এবং ফাইল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে অর্জিত কমিশন। সেইসঙ্গে অভিযোগ ওঠে, মাহফুজ আলম প্রভাব খাটিয়ে তার ভাইয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করছেন।
এ অভিযোগের জবাবে সোমবার দিবাগত রাত ১টা ৪১ মিনিটে এক ফেসবুক পোস্টে মাহফুজের ভাই মাহবুব আলম মাহি বলেন, একটি স্ট্যাটাস থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে ‘অস্বচ্ছ লেনদেন’-এর গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তিনি জানান, তার অস্ট্রেলিয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এখনো সক্রিয় এবং গত ৬ মাসের লেনদেনের বিবরণী প্রকাশযোগ্য। তিনি আরও বলেন, তিনি একজন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন এবং ২০২৩ সালে ওই অ্যাকাউন্টটি খোলেন।
মাহি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন যে, তিনি বা তার ভাই কোন তদবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার ভাষ্য, “আমার ভাই মাহফুজ কখনও কোনো তদবিরের কাজ করেননি, আমাকেও করতে দেননি। আমাদের পুরো পরিবার ৩০ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং এই ব্যবসা বাংলাদেশে স্বীকৃত ও বৈধ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “গত নভেম্বর থেকে দেশে ফেরার পর কেউ কেউ আমার ভাইকে দিয়ে তদবির করাতে চেয়েছে, কিন্তু সে সবকিছুকে স্পষ্টভাবে না বলেছে। আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের বিরুদ্ধে তদবির বা দুর্নীতির কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি, কারণ আমরা এমন কিছু করিইনি।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “নি আমিনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, না হলে আমি অস্ট্রেলিয়ায় আইনি ব্যবস্থা নেব।”
রাত ২টা ৫৯ মিনিটে মাহফুজ আলম নিজেও ভাইয়ের স্ট্যাটাস শেয়ার করে নিজের বক্তব্য দেন। তিনি লিখেন, “তদবির প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি—আমাদের এক পরিচিত ব্যক্তি আমার ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সে চায় বিটিভির একটি টেন্ডার করিয়ে দিলে পার্সেন্টেজ দেবে এবং জুলাইয়ে কিছু আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামে সহায়তা করবে। আমি শুনেই এটা নিষেধ করি। কারণ রাষ্ট্রের সম্পদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা চলবে না। পরবর্তীতে সেই টেন্ডারও বাতিল হয়।”
তিনি আরও জানান, ওই ব্যক্তি কথোপকথন রেকর্ড করে একটি সাংবাদিকের কাছে পাঠায়, তবে মাহফুজ বিষয়টি স্বীকার না করায় সেই সাংবাদিক সেটি প্রকাশ করেননি।
নিজের বিরুদ্ধে চলমান সমালোচনার জবাবে মাহফুজ বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এখন যারা উঠে পড়ে লেগেছে, তাদের অনেকের লেজকাটা পড়ে গেছে। একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এতে জড়িত। তবে সব ষড়যন্ত্র সামনে আসবে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “গত এক বছরে আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগই উঠেছে, দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ কেউ আনেনি। কারণ, আমি এসবের সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলাম না। আমাদের কাছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হাজার কোটি টাকার চেয়েও পবিত্র আমানত।”
সবশেষে মাহফুজ আলম বলেন, “কিছু কথা এবং বক্তব্য নিয়ে অপ্রয়োজনীয় জলঘোলা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক কিছু মহারথী আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত, কিন্তু জনগণকে এখন গুজব ও সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”