৩০ জুলাই রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলে ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূকম্পনের কেন্দ্র ছিল গভীর সমুদ্রে, যার ফলে জাপানসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে দ্রুত সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। ভূমিকম্পের চেয়ে ভয় আরও বেশি হয়ে ওঠে সম্ভাব্য সুনামি নিয়ে। কিন্তু কেন এমন ভয়াবহ হয় সুনামি? এবং কেন এর ঢেউ এত প্রাণঘাতী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ ঢেউ তৈরি হয় বাতাসের কারণে, যা পানির ওপরিভাগে সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, সুনামি জন্ম নেয় সমুদ্রের গভীরে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত কিংবা বিশাল ভূমিধসের মাধ্যমে। যখন এই প্রক্রিয়াগুলো হঠাৎ করে প্রচুর পরিমাণে পানি স্থানচ্যুত করে, তখন তা বিশাল জলরাশিকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দেয়, যার শক্তি হয়ে পড়ে ভয়ংকর বিধ্বংসী।
পৃথিবীর নিচে রয়েছে বিশাল টেকটোনিক প্লেট। যখন একটি প্লেট অন্যটির নিচে সরে যেতে থাকে, তখন সেখানে চাপ তৈরি হয়। এই জমা শক্তি হঠাৎ নির্গত হলে সমুদ্রের তলদেশে বড়সড় নড়াচড়া ঘটে। এতে পানি ওপর বা নিচের দিকে বিশালভাবে সরে গিয়ে তরঙ্গের সূচনা করে, যা হয়ে ওঠে সুনামি।
গভীর সমুদ্রে সুনামির ঢেউ ঘণ্টায় ৭০০–৮০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে, যা বিমানের গতির সমান। সেই সময়ে ঢেউয়ের উচ্চতা খুব বেশি থাকে না, তাই জাহাজে থাকা মানুষ তা বুঝতেই পারেন না। কিন্তু উপকূলের দিকে আসার সময় সমুদ্রের তলদেশ উঁচু হয়ে আসায় ঢেউ ধীরে চলে, কিন্তু এর পেছনের চাপ কমে না। ফলে তরঙ্গ বিশালাকার জলপ্রাচীরে পরিণত হয়ে জনপদে আঘাত হানে।
- সুমাত্রা, ২০০৪: ২৬ ডিসেম্বর ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ভারত মহাসাগরীয় উপকূলে আঘাত হানে সুনামি, মৃত্যু হয় প্রায় ২.৮ লাখ মানুষের।
- জাপান, ২০১১: ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামিতে প্রাণ হারান অন্তত ২০,০০০ জন।
- ক্রাকাতোয়া, ১৮৮৩: আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ও পরবর্তী সুনামিতে নিহত হন ৩৬,০০০ জন।
- লিসবন, ১৭৫৫: ভূমিকম্প ও সুনামিতে মারা যান ৩০-৫০ হাজার মানুষ।
- ফিলিপাইন, ১৯৭৬: মিনদানাও অঞ্চলে ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে এক সুনামিতে।