জুলাই আন্দোলনের সময় গোটা দেশ যখন বিক্ষোভে উত্তাল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে একে একে প্রাণ হারাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা, তখন আন্দোলনের নেতৃত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পুলিশের কাছে ঠিক কতটা অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে, এবং তা দিয়ে কতদিন তারা অভিযান চালাতে পারবে—এই তথ্য জানা। সেই প্রেক্ষাপটে নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্যবহার করে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তবে তা সংবাদ প্রকাশের জন্য নয়, বরং আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণে সহায়তার জন্য।
সেই সময় রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসায় অনুষ্ঠিত হয় একটি গোপন বৈঠক, যেখানে পুলিশের অস্ত্রভাণ্ডার, গোলাবারুদের ব্যবহার ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপসচিব নূরুল করিম ভূঁইয়া (এনকেবি)। এই বিশ্লেষণের সারাংশ তখন আন্দোলনের সিদ্ধান্তদাতাদের কাছে পাঠানো হয়, যা পরে আন্দোলনের পরিকল্পনায় ভূমিকা রাখে।
ফলাফল হিসেবে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত ৬ আগস্ট থেকে এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। এবং সেদিনই পতন ঘটে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের।
সম্প্রতি উপসচিব নূরুল করিম ভূঁইয়া তার ফেসবুকে একটি পোস্টে এ সংক্রান্ত কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পোস্টের শিরোনাম ছিল— ‘জুলাই যুদ্ধ আর জুলাই যোদ্ধা: কিছু না বলা কথা’।
তিনি লেখেন—
জুলাই মাসের আন্দোলন ও সেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া মানুষদের ঘিরে বিভিন্ন রকম মিথ্যা প্রচার ও কৃতিত্ব দাবি দেখা যায়, যা শুনলে বিরক্তি আসে। ইতিহাস ভালো, কিন্তু কেউ যখন নিজের ভূমিকাকে বাড়িয়ে তুলে কৃতিত্ব বিক্রি করতে চায়, তখন সেটা লজ্জাজনক হয়ে ওঠে। অনেকের মূল সম্বল শুধু আন্দোলনের কয়েকটি ছবি, যা তারা পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে প্রকৃত ইতিহাস একদিন না একদিন ঠিকই লেখা হবে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন—
আন্দোলনের দিন-তারিখ ঠিক করা হতো কীভাবে? প্রয়োজনে তা পিছিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাই বা কীভাবে হতো? ২৮ জুলাই ধানমন্ডির এক বাসায় বসে পুলিশের গোলাবারুদের হিসাব কষার প্রয়োজন কেন পড়ল? কে করল এসব কাজ? কাদের মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল?