ঢাকা মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) কাইয়ুম হোসেন নয়নের ভাষ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে যারা বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় আটক, তাদের প্রতি সাধারণ কয়েদিদের তীব্র ঘৃণা রয়েছে। অনেক সময় এসব ভিআইপি আসামিদের দেখলে অন্য বন্দিরা ‘থুতু’ মারার মতো অবমাননাকর আচরণ করে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ইনু, মেননসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ক্ষমতাসীন নেতা ও কর্মকর্তাকে নিয়ে সাধারণ বন্দিদের মধ্যে চরম বিরক্তি ও ক্ষোভ রয়েছে। কারণ তারা জনগণের অর্থ লুট করেছে, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকেও গণবিরোধী কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য এদের ওপর কয়েদিদের প্রতিক্রিয়া মারাত্মক নেতিবাচক। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের রাখা হয়েছে কেরানীগঞ্জের বিশেষ নিরাপত্তাসম্পন্ন কারাগারে।
কারাগার সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর এসব সাবেক এমপি ও মন্ত্রীদের বিভিন্ন কারাগারে রাখা হলেও নিরাপত্তা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের এখন কেরানীগঞ্জের একটি আলাদা ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে শুধুমাত্র তাদের মতো ৫৬ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত ও আরও ৩ জন সাবেক এমপি রয়েছেন, যারা ডিভিশন না পেলেও ঝুঁকির কারণে সেখানে রাখা হয়েছে।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, এই বিশেষ কারাগারটি ২১ জুন থেকে চালু হয়েছে, যা আগে নারীদের জন্য ছিল। পরে এটি ভিআইপি নিরাপত্তার জন্য সংস্কার করে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে সাধারণ কয়েদি নেই, এবং ৫৯ জন ভিআইপি আসামিকে এখানে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যদি আরও কারও প্রতি সাধারণ কয়েদিদের ক্ষোভ দেখা দেয়, তবে প্রয়োজনে এ কারাগারে নতুন আসামিও যোগ করা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এসব বন্দিদের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা নেই—এমন কারারক্ষীদের অন্য কারাগার থেকে বাছাই করে আনা হয়েছে। তাদের অতীতে কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই, তারা শিক্ষিত এবং দায়িত্বশীল।
বিশেষ কারাগারে বর্তমানে যেসব পরিচিত রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মেনন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক, মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মেয়র আতিকুল ইসলাম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম, হুইপ আ স ম ফিরোজ, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ এবং শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
এছাড়া আরও ১৮ সাবেক এমপি যাদের জনরোষের কারণে নিরাপত্তা সংকট রয়েছে তারাও এই বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন সাদেক খান, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, হাজী সেলিম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সুলতান মনসুর, আলী আজম মুকুল, কাজী জাফর উল্লাহ, শাহজাহান ওমর, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, শাহে আলম তালুকদার, নাসিমুল আলম, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, কামরুল আশরাফ খান পোটন, গোলাম কিবরিয়া টিপু, আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, মোরশেদ আলম ও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
এদের সকলের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিশেষ নিরাপত্তা এবং নজরদারিতে রাখার ব্যবস্থা চলবে।