সুনামি হলো এক প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বা ভূমিধসের ফলে সৃষ্টি হয়। সুনামি শব্দটি জাপানি শব্দ “tsu” (বন্দর) ও “nami” (ঢেউ) থেকে এসেছে, যার অর্থ “বন্দরের ঢেউ”। এটি মূলত বিশাল আকৃতির জলোচ্ছ্বাস, যা উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রবল বেগে আছড়ে পড়ে এবং ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়।
বিশ্ব ইতিহাসে বহু ভয়াবহ সুনামির ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে কয়েকটি মানবজাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের উপকূলে ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে যে সুনামি সৃষ্টি হয়, তা ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত। এই দুর্যোগে ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত, থাইল্যান্ডসহ ১৪টি দেশে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়।
২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের তোহোকু অঞ্চলে ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে আরেকটি ভয়াবহ সুনামি ঘটে। এই সুনামিতে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে, যার প্রভাব আজও বিদ্যমান।
এর আগে 1755 সালে পর্তুগালের লিসবনে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এক বিশাল সুনামি হয়, যাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং শহরটির প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যায়।
সুনামি একটি ভয়াবহ ও অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক শক্তি হলেও আধুনিক প্রযুক্তি ও স্যাটেলাইট নির্ভর আগাম সতর্কতা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাণহানি কমানো সম্ভব। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, সুনামি মহড়া এবং জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
সুনামি পৃথিবীর প্রাকৃতিক ব্যবস্থার একটি অংশ হলেও এর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রযুক্তিনির্ভর আগাম প্রস্তুতি একান্ত প্রয়োজন।