মিয়ানমারে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি হিসেবে দেশটির সামরিক সরকার জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) প্রকাশিত এক ভয়েস বার্তায় জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন জানান, “বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে আজ জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন আগামী ছয় মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে।”
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর সামরিক বাহিনী জরুরি অবস্থা জারি করে। সেই অভ্যুত্থান দেশটিকে সহিংস গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেয়, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সাবেক আইনপ্রণেতাসহ বিভিন্ন বিরোধী দল ইতিমধ্যেই এই সম্ভাব্য নির্বাচনকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ গত মাসে মন্তব্য করেন, এই নির্বাচন আসলে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘একটি প্রহসন’ মাত্র।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং প্রেসিডেন্ট বা সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এতে করে তিনি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা সংহত করার সুযোগ পাবেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার জানিয়েছে, নেপিদোতে দেওয়া এক বক্তৃতায় মিন অং হ্লাইং বলেন, “আমরা প্রথম পর্যায় অতিক্রম করেছি, এখন দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রবেশ করছি।” তিনি আরও জানান, আসন্ন নির্বাচন ডিসেম্বরেই হবে এবং সব যোগ্য নাগরিক যাতে ভোট দিতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে চীন বৃহস্পতিবার জানায়, তারা মিয়ানমারের চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সামরিক সরকারের পাশে রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, “চীন রাজনৈতিকভাবে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই মিয়ানমারের বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর মতপার্থক্য নিরসনকে সমর্থন করে।”
যদিও জান্তা সরকার এখনও নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি, তবু জানা গেছে যে নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে ইভিএম ব্যবহারে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে।
অন্যদিকে, সামরিক সরকার একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেছে, যার আওতায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দেওয়া বক্তব্য বা আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।