Wednesday, August 6, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়"আবু সাঈদের স্বপ্ন অপূর্ণ, সহযোদ্ধাদের প্রাপ্তির খাতা এখনও শূন্য"

“আবু সাঈদের স্বপ্ন অপূর্ণ, সহযোদ্ধাদের প্রাপ্তির খাতা এখনও শূন্য”

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় দমননীতির মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়ান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। পুলিশের গুলিতে বুক ঝাঁজরা হয়ে যাওয়ার সেই দৃশ্য বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করে। তার আত্মত্যাগে যে আগুন জ্বলে ওঠে, তা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে।

ছাত্র-জনতার ক্ষোভ ও দীর্ঘদিনের ক্ষরণ একত্র হয়ে, শেখ হাসিনার দমননীতির বিপরীতে দাঁড়ায় একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি। দীর্ঘ ১৫ বছরের দুঃশাসনের অবসান ঘটে, ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শাসক হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও আবু সাঈদের সহযোদ্ধারা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তির উত্তর। হতাশায় ডুবে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। উত্তরের জনপদের প্রতি চিরাচরিত বৈষম্য আজও নিরব কান্না হয়ে বাজছে তাদের বুকে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবু সাঈদের আত্মত্যাগ যেন রাজনৈতিক বিভাজনে ম্লান না হয়। তারা চান, তার আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষিত হোক—দলীয় রঙে নয়, দেশের স্বার্থে।

জুলাই আন্দোলন: রংপুর থেকে শুরু রাষ্ট্র সংস্কারের স্ফুলিঙ্গ

আন্দোলনের প্রথম ধাপটি ছিল ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কোটা সংস্কারকে ঘিরে, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ধাপের সূচনা হয় রংপুর থেকে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদের শাহাদাত এই আন্দোলনের গতি একেবারে বদলে দেয়।

সহযোদ্ধা সোহাগ শাহরিয়ার বলেন, “যদি ১৬ জুলাই না আসতো, তাহলে হয়তো আন্দোলনের ফলাফল দেরিতে আসতো। শেখ হাসিনার পতন ৩৬ দিনের মধ্যে হতো না।”

আবু সাঈদের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ

শিবলী সাদিক বলেন, শহীদ সাঈদের আত্মত্যাগ আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্যকে কেবল কোটা সংস্কারে সীমাবদ্ধ রাখেনি। আমরা তখন পুরো রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন চেয়েছি—চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন, গুম এবং বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি।

কিন্তু শেখ হাসিনার বিদায়ের পরও নতুন সরকার একই পথে হাঁটছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। ফ্যাসিবাদী কাঠামো এখনো অটুট, বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থাও রয়ে গেছে।

বেরোবিতে বৈষম্য, আবু সাঈদের স্বপ্নকে করছে অন্ধকারাচ্ছন্ন

আহমাদুল হক আলবি বলেন, “আবু সাঈদ নিজের জীবন দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় আজও রয়ে গেছে অবহেলিত। নেই বাজেট, গবেষণা সুবিধা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তার আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না।”

সাকিব ইসলাম বলেন, “আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, নেই আবাসন সুবিধা। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন আজও অধরা। সরকারের উচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে সুনজর দেওয়া।”

তরুণদের মাঝে এখনো আশার আলো

জাহিদ হাসান জয় বলেন, “আমরা চাই একটি স্বচ্ছ, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র। কিন্তু কাঠামোগত সংস্কার এখনও অসম্পূর্ণ। তবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে—মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, সচেতন নাগরিক সমাজ গড়ে উঠছে। তরুণেরা রাজনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তায় জড়িত হচ্ছে। এটাই আগামী দিনের আশার আলো।”

স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্পে তথ্য বিভ্রাটে ক্ষোভ

শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে স্থাপিত ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্পে’ ভুল তথ্য উপস্থাপনে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শহীদের জন্মতারিখসহ বিভিন্ন তথ্য ভুল থাকায় ফলকটি লাল কাপড়ে ঢেকে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ভুল তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। এ নিয়ে জবাবদিহি দাবি করেছেন সহযোদ্ধারা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

বেরোবি উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী বলেন, আবু সাঈদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা উন্নত করা হয়েছে, শিক্ষার্থী সংসদ গঠনের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, নতুন একাডেমিক ভবন ও ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণাধীন। আরও বিভাগ ও অনুষদ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আশ্বস্ত করেন, শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবে।

সারাংশ:
আবু সাঈদের আত্মত্যাগের এক বছর পরেও তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলেই মনে করছেন সহযোদ্ধারা। ইতিহাস বিকৃতি, বৈষম্য এবং ফ্যাসিস্ট কাঠামো অব্যাহত থাকলেও আশার আলো এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে তরুণদের চোখে। তাদের প্রত্যাশা, শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায়—নতুন বাংলাদেশ হোক সবার জন্য সমান মর্যাদা ও ন্যায়ের ঠিকানা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments