দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এসব পাচারে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার, ঋণ জালিয়াতি, ঘুষ ও কমিশনের অর্থ বিদেশে সরিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন ও অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর দুর্নীতিবাজদের দেশেও, বিদেশেও রেহাই না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই ধারাবাহিকতায় এখন দেশের পাশাপাশি বিদেশেও পাচারকৃত সম্পদ জব্দে নজর দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ছয়টি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ ও একজন সাবেক মন্ত্রীর বিপুল বিদেশি সম্পদ শনাক্ত করে তা জব্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কার্যকর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যারা অর্থ পাচার প্রতিরোধ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে একসাথে কাজ করছে।
টাস্কফোর্সের আওতায় বেক্সিমকো, সামিট, নাসা, জেমকন এবং দেশের একটি বড় আবাসন কোম্পানিসহ ছয়টি গ্রুপ এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন বিদেশি সম্পদ জব্দে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে এসব গ্রুপের নামে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
এই উদ্যোগ এসেছে বাংলাদেশের অনুরোধ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায়। এদের বিরুদ্ধে কয়েকটি দেশে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের চূড়ান্ত রায় ও মালিকানা নির্ধারণের পরই ওই অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া এগোবে।
টাস্কফোর্সের একজন সদস্য জানিয়েছেন, বিদেশে জব্দ হওয়া সম্পদের তথ্য যাচাই, প্রমাণ সংগ্রহ এবং আইনি লড়াইয়ের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন দেশে ল ফার্ম নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে এ কাজ দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ধারাবাহিকতা অপরিহার্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুদক অর্থ ফেরাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা জোরদার করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ‘ফিন্যান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সি অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষরের আলোচনা চলছে, যা ভবিষ্যতে অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া সহজ করবে।