শেখ হাসিনার বিচার হলেও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর এক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আলোর নতুন অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র ‘রক্তাক্ত মহাসড়ক: যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড’-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের ধারণা, প্রধান আসামি যিনি, শেখ হাসিনা—তার বিচার হলেও হয়তো তাকে আর দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। সম্ভবত তিনি তার শেষ দিন ভারতের মাটিতেই কাটাবেন। তবে বাংলাদেশি মানুষের মনে তার প্রতি যে ক্ষোভ ও ঘৃণা জমে আছে, সেটাই হয়তো আমাদের বড় অর্জন হয়ে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের এত যন্ত্রণা, এত রাগ, এত অভিমান—এই ঘৃণার মধ্য থেকেই আশার জন্ম হয়, যেন এমন শাসক আর কখনও দেশে না আসে। আমরা চেষ্টা করছি, এবং সেই চেষ্টায় কোনো ঘাটতি রাখছি না।”
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, “যুদ্ধক্ষেত্রেও নিরস্ত্র, পালাতে থাকা, আহত বা কাতর মানুষকে হত্যা করা নিষিদ্ধ। অথচ সেই সময় দেখা গেছে, নিরস্ত্র মানুষকে পেছন থেকে গুলি করে মারা হয়েছে, মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর এক ব্যক্তিকে কাছে গিয়ে গুলি করা হয়েছে। এমনকি লাশ পর্যন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজে এ ধরনের বর্বরতা কল্পনাও করা যায় না।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, “যে সরকার পুলিশ বাহিনীকে এমন হিংস্র, বেপরোয়া ও অমানবিক বাহিনীতে পরিণত করেছে, তার অমানুষত্বের মাত্রা কত গভীর, তা বুঝতেই আমরা শিউরে উঠি। হয়তো প্যালেস্টাইনের ওপর যেভাবে ইসরায়েলি বাহিনী আক্রমণ করে, তেমনভাবে আমাদের পুলিশ বাহিনী সেদিন জনগণের ওপর নেমে এসেছিল। অথচ এ বাহিনী চলে জনগণের করের টাকায়।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যদি শেখ হাসিনার মতো বিচার করতাম, তবে এই বিচার হয়তো চার-পাঁচ মাসেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, প্রশ্নাতীত একটি বিচারের পথেই হাঁটছি—যা ২০ বা ৩০ বছর পরেও প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও আইন সংশোধনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করাই আমাদের লক্ষ্য।”
নিজ দায়িত্ব পালনের ঝুঁকি সম্পর্কেও খোলামেলা কথা বলেন আসিফ নজরুল। জানান, “আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেছিলেন—এই মন্ত্রণালয়ের কাজ সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়। এই সরকার দায়িত্ব ছাড়ার পর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকব আমি। কারণ সবাই জানেন, কেন এই ঝুঁকি।”
তবে দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, “আমার জানা মতে, আমরা সুবিচার নিশ্চিত করতে এক বিন্দু গাফিলতি করিনি। আমাদের কোনো অবিচার করার ইচ্ছাও নেই। ইনশাআল্লাহ, আশা করি, এই সরকারের মেয়াদেই শেখ হাসিনার বিচার সম্পন্ন হবে।”