Wednesday, August 6, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়অভ্যুত্থানের এক বছর পর: স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কি নিশ্চিত হয়েছে?

অভ্যুত্থানের এক বছর পর: স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কি নিশ্চিত হয়েছে?

দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতার জীবন উৎসর্গ ও হাজারো মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশের নিরাপত্তা আজ কতটা নিশ্চিত? যে আধিপত্যবাদ এক সময় হাসিনা ও তার সরকারকে একদলীয় দানবে রূপান্তর করেছিল, সেই আধিপত্যবাদকে কতটা রুখতে পেরেছি—এখনই সেই হিসাব কষার সময়। এই হুমকিগুলো যথাসময়ে চিহ্নিত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আবারও আমাদের ঘাড়ে চাপতে পারে ফ্যাসিবাদের কালো ছায়া।

আধিপত্যবাদীরা যদি পুনরায় সুযোগ পায়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চরম হুমকির মুখে পড়বে। সেজন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে। ইদানীং ঘটে যাওয়া পাকিস্তান-ভারত ও ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে যে, আধুনিক যুগে যুদ্ধের ধরন পাল্টে গেছে। এখন সৈন্য দিয়ে নয়, প্রযুক্তি ও অস্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধ চালানো হচ্ছে। লক্ষ্য—ভূখণ্ড দখল নয়, বরং প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা।

এই বাস্তবতায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের প্রতিরক্ষা কৌশলও নবভাবে নির্মাণ করতে হবে, বিশেষত অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে। ১৬ বছরব্যাপী হাসিনা সরকারের নতজানু নীতির পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই জাতির সম্মান ও স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের নিজেদের সক্ষমতা ও কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করা ছাড়া বিকল্প নেই।

একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর ওপর বলপ্রয়োগ চলছে। ভিত্তিহীন গোয়েন্দা তথ্যে দখলদারিত্বের নজির আমরা আফগানিস্তান ও ইরাকে দেখেছি। বাংলাদেশের বাস্তবতাও এর বাইরে নয়।

হাসিনার পতনের ফলে বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব কমেছে, যার জের ধরে প্রতিবেশী দেশটি ভূরাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে তারা হিন্দু নির্যাতনের মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে, মিডিয়া, কূটনীতি ও সীমান্তে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। বিএসএফ নির্দয়ভাবে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে, বাংলাদেশ মিশনে হামলা করেছে, এমনকি ভারতীয় মুসলমানদের বাংলাদেশি বলে পুশ-ইন করছে।

ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হওয়ায় মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশ পশ্চিমা সহানুভূতি কতটা পাবে, সেটি অনিশ্চিত। এর মধ্যে ভারতের কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের ভৌগোলিক অঞ্চল নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করছে, যা আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।

ভারতের আকাশ শ্রেষ্ঠত্বের বিপরীতে আমাদের প্রতিরক্ষানীতিতে নতুন পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। পাকিস্তান ভারতের আগ্রাসন সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, কারণ তারা ছিল পূর্ণ প্রস্তুত এবং চীনের সঙ্গে কৌশলগত মৈত্রীর কারণে তাদের প্রতিরক্ষা ছিল সুসংগঠিত। পাকিস্তান তাদের সাইবার সক্ষমতা এবং জাতীয় ঐক্য কাজে লাগিয়েছে।

অন্যদিকে, ইরান ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার প্রথম ধাপে বিপর্যস্ত হলেও পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইরানের গোয়েন্দা ত্রুটি এবং কৌশলগত একাকীত্ব তাদের দুর্বল করলেও, পরে তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, জাতিগত ঐক্য ও জনগণের সাহস পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে এখনো ‘এয়ার সুপিরিয়রিটি’ বা আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়, তবে বিকল্প কৌশল অনুসন্ধান আমাদের পক্ষে সম্ভব। আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো, সেই ঐক্য অক্ষুণ্ণ রাখা, যা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সময় তৈরি হয়েছিল। এরপর প্রয়োজন বিকল্প প্রতিরক্ষা কৌশল এবং আঞ্চলিক শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করে প্রতিরক্ষা নীতি সাজানো।

সবচেয়ে বড় হুমকি এখনো আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে বিদেশি প্রভাব। একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার অপারেশন সেল নাকি বসেছিল বাংলাদেশি সংস্থার সদর দপ্তরেই! এটা দেশের জন্য বড় হুমকি। যেমন ইসরায়েল ইরানের শীর্ষ জেনারেল ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করে বিশাল ক্ষতি করেছিল। সুতরাং, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে বিদেশি প্রভাবমুক্ত করে পরিশুদ্ধ করতে হবে।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার চিত্রও ভালো নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো অভ্যুত্থানের মানসিক ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দুর্বল, রাজনৈতিক ঐক্যেও ফাটল দেখা দিয়েছে। থানা-পুলিশ এবং আমলারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, ক্ষমতার ভবিষ্যৎ নিয়ে দোলাচলে আছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা এখনো সক্রিয়।

তাই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কাঠামোগত পুনর্গঠন জরুরি। বিদেশি এজেন্টদের প্রভাব একবার ঢুকে পড়লে তা শরীরের রক্তপ্রবাহের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে বিশুদ্ধ “রক্ত” সঞ্চালনের ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments