Thursday, August 7, 2025
spot_imgspot_img
Homeমধ্যপ্রাচ্যভাড়াটে উচ্ছেদ ও ভাড়া বাড়িয়ে তোপের মুখে গৃহহীনতা বিষয়ক মন্ত্রী রোশনারা আলী

ভাড়াটে উচ্ছেদ ও ভাড়া বাড়িয়ে তোপের মুখে গৃহহীনতা বিষয়ক মন্ত্রী রোশনারা আলী

যুক্তরাজ্যের গৃহহীনতা-বিষয়ক মন্ত্রী ও লেবার পার্টির ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সংসদ সদস্য রোশনারা আলী নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন। পূর্ব লন্ডনের নিজস্ব টাউন হাউস থেকে চারজন পুরনো ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করে সেখানে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৭০০ পাউন্ড ভাড়া নির্ধারণের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য আই পেপার এ তথ্য প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবার পার্টি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতায় আসার পর রোশনারা আলী মন্ত্রিত্বে নিযুক্ত হন। এর পর তিনি লন্ডনের অলিম্পিক পার্কসংলগ্ন চার বেডরুমের বাড়িটির লিজ নবায়ন না করে ভাড়াটেদের নোটিশ দেন। রেস্তোরাঁ মালিক লরা জ্যাকসনসহ তারা তখন ৩ হাজার ৩০০ পাউন্ড মাসিক ভাড়ায় বসবাস করতেন। গত নভেম্বর মাসে তাদের চার মাসের সময় দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়।

ভাড়াটেরা চলে যাওয়ার অল্প কিছুদিন পরেই বাড়িটি ৪ হাজার পাউন্ডে পুনরায় ভাড়া দিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, যা আগের তুলনায় ৭০০ পাউন্ড বেশি। তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায়, নতুন ভাড়াটেরা সেই অতিরিক্ত ভাড়াতেই বাস করছেন। অথচ এটি লেবার পার্টির ঘোষিত ভাড়াটে সুরক্ষা নীতিমালার সম্পূর্ণ বিরোধী।

পূর্বের ভাড়াটে জ্যাকসন দ্য আই পেপারকে বলেন, “এই ঘটনা পুরোপুরি রসিকতা এবং এক ধরনের চাঁদাবাজি।”

আগামী বছর যুক্তরাজ্যে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন ভাড়াটে সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, বাড়িওয়ালা যদি সম্পত্তি বিক্রির উদ্দেশ্যে ভাড়াটেদের বের করে দেন, তাহলে বাড়ি খালি হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তা পুনরায় ভাড়া দেওয়া যাবে না।

রোশনারার ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানায়, তিনি বাড়িটি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় আবার ভাড়ায় দেন। তার মুখপাত্র দাবি করেন, তিনি সকল আইনগত প্রক্রিয়া মেনেই কাজ করেছেন। যদিও এ বক্তব্যের পরও বিতর্ক থামেনি।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভাড়াটে অধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কনজারভেটিভ পার্টির শ্যাডো হাউজিং সেক্রেটারি জেমস ক্লেভারলি এ ঘটনাকে “চরম ভণ্ডামি” বলে আখ্যা দিয়ে রোশনারার পদত্যাগ দাবি করেছেন।

বিতর্ক আরও বেড়ে যায় যখন জানা যায়, রোশনারার হয়ে সম্পত্তি পরিচালনাকারী দুটি লেটিং এজেন্সি—জ্যাক বার্কলে এস্টেটস ও অ্যাভিনিউ লেটিংস—ভাড়াটেদের কাছ থেকে ঘর রং করার জন্য প্রায় ২ হাজার পাউন্ড এবং পেশাদার পরিচ্ছন্নতার জন্য ৩৯৫ পাউন্ড দাবি করেছিল।

২০১৯ সালের টেন্যান্ট ফি অ্যাক্ট অনুযায়ী, এসব ফি সম্পূর্ণ অবৈধ। এই আইনে বলা আছে, ক্ষয়ক্ষতির জন্য বাড়িওয়ালাই দায়ী এবং পেশাদার ক্লিনিংয়ের ফি ভাড়াটের কাছ থেকে নেওয়া যাবে না। জ্যাকসন জানান, তারা যখন জানান যে বাড়িওয়ালা একজন লেবার এমপি, তখনই রহস্যজনকভাবে ফিগুলো বাতিল করা হয়। তিনি বলেন, “আমরা যদি এই আইনগুলো না জানতাম, তাহলে হয়তো ওই টাকা গুনতেই হতো। এটা একেবারে শোষণমূলক।”

জানা গেছে, ২০১৪ সালে রোশনারা আলী বাড়িটি কিনেছিলেন। বর্তমানে সেটি বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে এবং দাম ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯৫ পাউন্ড—যা মূল ক্রয়মূল্যের চেয়ে প্রায় ৩ লাখ পাউন্ড বেশি। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মূল্য কিছুটা কমিয়ে ৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৫ পাউন্ড থেকে হ্রাস করা হয়েছিল।

এই ঘটনা রোশনারা আলীর জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, একজন গৃহহীনতা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে ঠিক যে সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে তিনি কাজ করার কথা, এখন সেগুলোরই জন্মদাতা হিসেবে অভিযুক্ত হচ্ছেন তিনি।

ভাড়াটেদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা জেনারেশন রেন্ট-এর প্রধান নির্বাহী বেন টুইমি এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এটি এক বিস্ময়কর ঘটনা এবং সরকারের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা—যাতে তারা দ্রুত নতুন আইন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments