Thursday, August 7, 2025
spot_imgspot_img
Homeরাজনীতিগুজব, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিপরীতে দলীয় অবস্থান চেয়েছিলাম” — হাসনাত আবদুল্লাহ

গুজব, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিপরীতে দলীয় অবস্থান চেয়েছিলাম” — হাসনাত আবদুল্লাহ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, দলের উচিত ছিল গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু অসৎ গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া। অথচ এর পরিবর্তে, পার্টি যে ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ জারি করেছে, তা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রের গল্পকে আরও উসকে দিয়েছে।
তিনি বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) কক্সবাজার সফর ঘিরে জারি করা শোকজের জবাবে এসব কথা বলেন। বিষয়টি নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ারও করেছেন তিনি।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে না গিয়ে কক্সবাজার সফরে যান এনসিপির পাঁচজন কেন্দ্রীয় নেতা। এই সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগও তোলা হয়, যদিও সংশ্লিষ্টরা এটিকে পুরোপুরি গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

তবে দলীয় অনুমতি না নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় পার্টির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। তাতে বলা হয়, সফরের কারণ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে। সেই সময়সীমার মধ্যেই নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছিল একটি ন্যায্য, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বৈরতন্ত্রমুক্ত রাষ্ট্রের স্বপ্নে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঘোষিত সরকারের উচিত ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র তৈরি করা, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অভ্যুত্থানের মূল নেতৃত্বদানকারী ও শহীদ পরিবারগুলোর মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় এমন কিছু বক্তব্য এসেছে, যা অভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উদাহরণস্বরূপ, বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে — যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এবং নতুন সংবিধানের দাবিকে দুর্বল করে।

তিনি জানান, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারেন যে আন্দোলনে আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে তিনি নিজে থেকে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ অনুষ্ঠানটি ঐক্যের চেয়ে বিভাজনকেই উৎসাহিত করছিল।
এ কারণে পরদিন তিনি ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, উদ্দেশ্য ছিল ঘটনাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা এবং অসম্পূর্ণ ঘোষণাপত্রের প্রতি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ জানানো।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ৪ আগস্ট রাতে তিনি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীকে জানান যে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণে যাচ্ছেন। নাসিরউদ্দিন তাকে জানান যে তিনি বিষয়টি আহ্বায়ককে জানিয়ে দিয়েছেন এবং তিনি সম্মতি দিয়েছেন। পরে সারজিস আলম, তাসনিম জারা, খালেদ সাইফুল্লাহ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সফরে তার সঙ্গে যোগ দেন।

কিন্তু, সফর শুরুর মুহূর্ত থেকেই রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে ছিলেন তারা। বিমানবন্দর থেকে তাদের প্রতিটি মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। কিছু মিডিয়া এইসব উপাদানকে নাটকীয় করে তোলে এবং বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে উপস্থাপন করে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয় যে তারা পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে যাচ্ছেন গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে অংশ নিতে — অথচ তখন তিনি বাংলাদেশে ছিলেনই না।

হাসনাত বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থার এই ধরণের আচরণ, যেখানে কাউকে ‘টার্গেট’ করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করে। এই ধারা আগেও দেখা গেছে, কিন্তু ‘নতুন বাংলাদেশ’-এ এমনটা প্রত্যাশিত ছিল না।”

সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন তাসনিম জারার বিরুদ্ধে চালানো কুরুচিপূর্ণ ও লাঞ্ছনামূলক প্রচারণা। শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণেই তাকে কেন্দ্র করে যেভাবে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট তৈরি ও ছড়ানো হয়েছে, তা একজন রাজনীতিকের প্রতি চরম অবমাননাকর। তিনি মনে করেন, এই ধরনের আক্রমণের উদ্দেশ্যই হলো রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করা।

তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এখন সেই নারীদেরই লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।”

শোকজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে যেভাবে শোকজ পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ম বহির্ভূত এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতার অভাবের পরিচায়ক। পার্টির কোনো গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ সেখানে উল্লেখ করা হয়নি। এটি স্পষ্ট যে, আমাদের দমন করতে এ শোকজ একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।”

সবশেষে তিনি বলেন, “আমি এনসিপির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মাধ্যমে পার্টি আরও পরিণত হবে বলেই বিশ্বাস করি। আমাকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments