উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর জনপদ অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ একাধিকবার এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তার ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হন। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী আত্মগোপনে বা পলাতক, আর বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন পর মুক্ত পরিবেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
চলতি ১৭তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ১০ জন, আর জামায়াতের রয়েছে একক প্রার্থী। ইসলামি দলগুলোর প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন। তারা নিয়মিত সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ এবং ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন—দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম মোল্লা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ট্রাস্টের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা সুরঞ্জন ঘোষ, ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আহমেদ লাকী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন, সাবেক উপসচিব জহির উদ্দিন ভূইয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি হাফিজুল্লাহ হিরা, বুয়েট ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি প্রকৌশলী নেছার উদ্দিন, তিনবারের নির্বাচিত অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু এবং মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর।
তবে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর আলাদা আলাদা প্রচারণা বিএনপির তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করছেন, এ বিভক্তি নির্বাচনের আগে দলকে ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। ফজলুর রহমানের শেখ মুজিবপ্রীতি এবং আক্রমণাত্মক বক্তব্য নিয়েও ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তারা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট শেখ রোকন রেজাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনে মানুষের ভোগান্তি দেখে এখন তারা সৎ ও আদর্শিক নেতৃত্বের জন্য জামায়াতকে বেছে নেবে।
এছাড়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট বিল্লাল আহমেদ মজুমদার ও হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ আহসানুল্লাহ; খেলাফত মজলিসের মনোনয়নপ্রত্যাশী মাওলানা অলিউর রহমান; আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন সমাজকর্মী ডা. শাহীন রেজা চৌধুরী। ডা. শাহীন দাবি করেছেন, ‘আলোকিত হাওর’ গড়ার লক্ষ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হবেন।
ফলে সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদের দীর্ঘদিনের নিরাপদ আসন এবার বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে দাঁড়িয়েছে।