বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। লন্ডনে অবস্থানরত এই শীর্ষ রাজনীতিকের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিনিধিদের একাধিক বৈঠকের খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা ঢাকার রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিএনপির নেতৃবৃন্দের মতে, তারেক রহমান এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত ও পরিমিত বক্তব্য দিচ্ছেন। রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতা ও কূটনৈতিক যোগাযোগে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার সক্রিয়তা বেড়েছে, যেখানে রাজনৈতিক বার্তার পাশাপাশি জনগণের প্রত্যাশা তুলে ধরা হচ্ছে। দলের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসবে, আর দলটির নেতৃত্বে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তারেক রহমান আলোচনায় থাকবেন।
দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছে। দুর্নীতি, অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও মানি লন্ডারিংয়ের মতো মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছিল। তবে আঞ্চলিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় বর্তমানে অনেক কূটনীতিকের আগ্রহের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন তিনি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি দেশে ফিরবেন, আর এই পরিস্থিতি সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। সূত্রমতে, চলতি বছরের আগস্টের শেষ দিকে বা ডিসেম্বরের শুরুতে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রভাবশালী দেশগুলো বিএনপিকে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, কোরিয়া, ব্রিটেন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় ত্রিশটি দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা, জাতীয় সরকার ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।
বিএনপির নেতারা বলছেন, জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে তারেক রহমানের ঘোষিত রূপরেখা বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কূটনীতিকরাও মনে করছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারে, তাই তারা তারেক রহমানকে কেন্দ্র করে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।
বিএনপির বিদেশবিষয়ক নেতাদের মতে, আধুনিক বিশ্বে রাজনৈতিক ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক জরুরি এবং দমন-পীড়নমুক্ত গণতন্ত্র ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বৈঠক হচ্ছে। এর মধ্যে কাতারের এক মন্ত্রী, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, ব্রিটিশ এমপি, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কসহ অনেকে রয়েছেন।
সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন তারেক রহমানের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে ক্ষমতায় গেলে বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনৈতিক মহলে তারেক রহমানের প্রতি এই আগ্রহ তাৎপর্যপূর্ণ। যদি সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়, তবে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। ফলে বিভিন্ন দেশ এখন থেকেই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক গড়ে তোলার ভিত্তি তৈরি করছে। তবে সবকিছুই শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে জনগণের রায় ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ওপর।