জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। তবে সংস্কারের জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়নি। এই সনদ চূড়ান্ত হলে তা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেটাকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সংস্কার প্রশ্নে জুলাই সনদ কেন চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না এবং সংকট কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। কমিশন জানায়, সনদ চূড়ান্ত ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে আগামী সপ্তাহে পুনরায় আলোচনা শুরু করবে তারা।
২৮ জুলাই দলগুলোর কাছে সনদের খসড়া পাঠানো হয় এবং তারা তাদের মতামতও দিয়েছে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, দুই-তিন দিনের মধ্যে দলগুলোর কাছে পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় মাস মেয়াদে কাজ শুরু করে এবং ১৫ আগস্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তাই, সময় শেষের কাছাকাছি আসায় যদি দলগুলো সনদ চূড়ান্ত করতে না পারে, তাহলে কি হবে?
জামায়াতের নেতা আকন্দ বলেন, এই বিষয়ে সরকারের দৃঢ় ভূমিকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ কোনো একক দলের বিষয় নয়।’ তিনি জানান, আসন্ন বৈঠকে দলগুলোকে ডাকা হলেও এখনো একমত হওয়ার ব্যাপারে সংশয় আছে।
আকন্দ আরও বলেন, ‘যদি একমত না হওয়া যায়, তাহলে সনদে স্পষ্ট করা হবে কাদের সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে। সনদ দ্রুত স্বাক্ষর করে ঘোষণা দিয়ে এর ভিত্তিতে নির্বাচন করতে হবে।’
জামায়াতের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই বলে তিনি জানান, ‘আমরা সবকিছু জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে বলেছি। যেমন একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও সরকার প্রধান হতে পারবেন না, এ বিষয়ে একটি জাতীয় দল একমত না হলে সরকারকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন নিতে হবে। সরকার যদি এমন উদ্যোগ না নেয়, তাহলে সেটা সরকারের ব্যর্থতা।’
এনসিপির নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, দলীয় পদে প্রধানমন্ত্রীর না থাকা, দুই সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ কিছু বিষয় একমত না হলে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না।
বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা সবসময় জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনায় রাজি। তবে চূড়ান্ত সনদ তাদের কাছে পাঠানো হলে আলোচনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলেই তারা স্বাক্ষর করবে। তিনি জানান, ‘সাংবিধানিক ও আইনি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের সম্মতি রয়েছে। অন্য কোনো প্রস্তাব এলে তাতেও আলোচনা হবে।’
কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ তাদের পরবর্তী কাজ। তবে বাস্তবায়নের পথ খুঁজে বের করার দায়িত্ব দলগুলোর। ঐকমত্য কমিশনের কাজ অনুঘটকের মতো।
তিনি বলেন, ‘সনদে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন করে সেসব নিয়ে কাজ করা হচ্ছে না। যেসব বিষয়ে মতবিরোধ বা নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, সেগুলো নিয়েই সনদ প্রস্তুত হবে।’
আলী রীয়াজ আরও জানান, ‘সকল বিষয় নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করা কঠিন; এতে অনেক সময় লাগতে পারে। তাই এসব পরামর্শ হিসেবে রেখে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এগুলো দেখবে এবং সেই ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবে বলে আমরা আশা করছি।’
স্বাক্ষর কবে হবে তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি, তবে জানান এটা দলগুলোর প্রতিক্রিয়া ও চূড়ান্ত খসড়ার ওপর নির্ভর করবে এবং দ্রুত কাজ করার চেষ্টা থাকবে।
মেয়াদ শেষের কাছাকাছি আসায় দলগুলো একমত না হলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিষয়টি দেখছি। ১৫ আগস্ট আসুক, তারপর দেখা যাবে।’