Saturday, August 9, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকমার্কিন ৫০% শুল্কের ধাক্কা: রপ্তানি সংকটে ভারত, সমাধানে সময় হাতে মাত্র ১৯...

মার্কিন ৫০% শুল্কের ধাক্কা: রপ্তানি সংকটে ভারত, সমাধানে সময় হাতে মাত্র ১৯ দিন

রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শাস্তিমূলক পদক্ষেপে ভারতের রপ্তানি খাত বড় ধাক্কার মুখে পড়েছে। বুধবার (৬ আগস্ট) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক বসানো হবে, যা মিলিয়ে মোট শুল্কের হার দাঁড়াবে ৫০%। আগামী ২৭ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।

ভারত সরকার এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায়’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ১০-১৫% শুল্কবৃদ্ধি তারা হয়তো সহ্য করতে পারেন, কিন্তু ৫০% হার তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে ধ্বংস করবে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের অর্থনীতিতে এ ধরনের ধাক্কা সাম্প্রতিক সময়ে আর আসেনি।

ভারত বছরে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। ট্যারিফের এ হার বজায় থাকলে প্রায় সব রপ্তানিই অলাভজনক হয়ে পড়বে। এর ফলে বিশেষত শ্রমনির্ভর শিল্প যেমন টেক্সটাইল ও গহনা খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তামিলনাডুর পোশাক কারখানা বা গুজরাটের স্বর্ণ ও হীরার শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়তে পারে।

জাপানি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান নোমুরা বলেছে, এই পদক্ষেপ কার্যত ভারতের জন্য এক ধরনের ‘বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা’। মার্কিন বাজার ভারতের মোট রপ্তানির ১৮% এবং জিডিপির ২.২% অবদান রাখে। আগে শুল্ক ২৫% হওয়ার সম্ভাবনায় প্রবৃদ্ধি ০.২–০.৪% হ্রাসের শঙ্কা ছিল, এখন ৫০% শুল্কে সেই প্রভাব আরও গভীর হবে।

এ পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে কৌশলগত বিকল্পগুলো নতুনভাবে বিবেচনা করার সুযোগ এসেছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা হতে পারে। আসন্ন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলন এই দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে অন্যরা মনে করেন, রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করা হতে পারে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া থেকে ক্রুড কেনায় আগের তুলনায় সাশ্রয় এখন অনেক কম, তাই বিকল্প সরবরাহকারীর দিকে ঝোঁকার ফলে বড় ক্ষতি হবে না। তবে মোদি-পুতিন ফোনালাপ এবং আসন্ন পুতিনের ভারত সফর ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভারত-রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এখনও বন্ধ হয়নি। এ মাসের শেষে মার্কিন প্রতিনিধিদল দিল্লি সফরে আসবে। বিশ্লেষকদের মতে, আলোচনায় অগ্রগতি না হলে পরিস্থিতি বাণিজ্য যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। কৃষি ও দুগ্ধখাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিয়ে আপস করতে ভারত রাজনৈতিক চাপে পড়তে পারে, তবে কৃষক স্বার্থে মোদি ছাড় দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

কিছু বিশেষজ্ঞ পাল্টা সমপরিমাণ শুল্ক আরোপের পরামর্শ দিচ্ছেন, যদিও এর সম্ভাবনা কম। অতীতে ২০১৯ সালে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে মার্কিন শুল্ক বাড়লে ভারত ২৮টি মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক দিয়েছিল, সেই নজিরও আছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments