আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প, যা বছরে শত শত কোটি ডলারের বাজার সৃষ্টি করে। এই খাতে শীর্ষ তিন রপ্তানিকারক দেশ হলো চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। ভারতও বড় আকারে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকে। তবে এই দেশগুলো এখন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হচ্ছে। শনিবার (৯ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ কর্মরত এবং দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিবেদনে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের আয়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।
তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন— ২০২৩ সালে ২৬০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ও ২০২৪ সালে ৩০১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ, যারা ২০২৩ সালে ৪৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪ সালে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম, ২০২৩ সালে ৪২ দশমিক ১ ও ২০২৪ সালে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় করেছে দেশটি।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা তুরস্ক ২০২৩ সালে ৩৮ দশমিক ৬ এবং ২০২৪ সালে ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ভারতের অবস্থান পঞ্চম— ২০২৩ সালে ৩৭ দশমিক ৫ ও ২০২৪ সালে ৩৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে তারা। ষষ্ঠ স্থানে ইতালি (৩৭ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার) ও সপ্তম স্থানে জার্মানি (২০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার), যদিও এ দুই দেশের ২০২৪ সালের তথ্য পাওয়া যায়নি।
অষ্টম স্থানে যুক্তরাষ্ট্র, যারা ২০২৩ সালে ২১ দশমিক ৮ ও ২০২৪ সালে ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। নবম স্থানে পাকিস্তান— ২০২৩ সালে ১৮ দশমিক ৪ ও ২০২৪ সালে ১৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয়। দশম স্থানে স্পেন, যারা ২০২৩ সালে ১৪ দশমিক ৬ এবং ২০২৪ সালে ২১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
শীর্ষে থাকার কারণগুলো
- চীন: উন্নত প্রযুক্তি, বিশাল উৎপাদন ক্ষমতা ও কম খরচে উৎপাদনের কারণে চীন বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বস্ত্র রপ্তানি করে। প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।
- বাংলাদেশ: টি-শার্ট, শার্ট ও ট্রাউজার উৎপাদনে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। বৃহৎ উৎপাদন সক্ষমতা ও সাশ্রয়ী শ্রম খরচে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ওয়ালমার্ট, জারা, এইচঅ্যান্ডএম-এর মতো ব্র্যান্ড তাদের প্রধান ক্রেতা।
- ভিয়েতনাম: নিটওয়্যার, স্পোর্টসওয়্যার ও জ্যাকেটে দক্ষতা, দ্রুত সরবরাহ, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব কারখানা— এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপে তারা জনপ্রিয়।
- তুরস্ক: ডেনিম, তোয়ালে, হোম ফেব্রিক এবং সুতির পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে। ইউরোপের কাছাকাছি থাকায় দ্রুত সরবরাহের সুবিধা রয়েছে।
- ভারত: পোশাক, সুতা, রেশম, পাট, উল ও সিনথেটিক ফেব্রিক রপ্তানিতে তারা সক্রিয়। প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ ও জার্মানি।
- ইতালি: বিলাসবহুল ফেব্রিক, ডিজাইনার পোশাক ও উলের পণ্যে বিখ্যাত। কারুশিল্প ও শৈল্পিকতার জন্য বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর কাছে জনপ্রিয়।
- জার্মানি: নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা ও গাড়ি শিল্পের জন্য উচ্চ প্রযুক্তির বস্ত্র উৎপাদনে শীর্ষে।
- যুক্তরাষ্ট্র: প্রধানত প্রযুক্তিগত ফেব্রিক, ডেনিম ও শিল্প উপকরণ রপ্তানি করে, যা প্রতিরক্ষা, চিকিৎসা ও মোটরগাড়ি শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
- পাকিস্তান: তুলা উৎপাদনে শক্তিশালী হওয়ায় পোশাক, তোয়ালে ও বিছানার চাদর রপ্তানিতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা রয়েছে।
- স্পেন: ফ্যাশনেবল পোশাক ও গৃহস্থালি বস্ত্রে এগিয়ে। জারা ও ম্যাঙ্গোর মতো ব্র্যান্ড দেশটির পরিচিতি বাড়িয়েছে।