Sunday, August 10, 2025
spot_imgspot_img
Homeবিশেষ সংবাদভুল সন্দেহে পিটিয়ে স্বামী ও জামাই নিহত, নিঃস্ব বধূর কান্না ‘মুই কার...

ভুল সন্দেহে পিটিয়ে স্বামী ও জামাই নিহত, নিঃস্ব বধূর কান্না ‘মুই কার কাছোত বিচার চাইম?’


‘মুই কার কাছোত বিচার চাইম? কী করব, কেমন করে বাঁচব? আমার ছোট ছেলেমেয়েদের কী খাওয়াব, পড়াব? আমার নির্দোষ স্বামীকে কেন মারলো? বেটার ভবিষ্যত কী হবে?’ — আহাজারি ও কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ভারতী দাস। শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘ভুল’ সন্দেহে তার গোছানো সংসারের সব কিছু একে একে ধ্বংস হয়ে গেছে। চোর সন্দেহে তার স্বামী রুপলাল দাস এবং ভাগ্নে জামাই প্রদীপ দাসকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শোকে বিহ্বল ভারতী দাসের বাড়িতে আজ মেয়ে নুপুরের বিয়ের দিন ঠিক করার কথা ছিল।

কাঁদতে কাঁদতে বার বার মুর্ছা যাওয়া ভারতীর চোখ লাল হয়ে গেছে। তিনি সন্তানদের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছেন, কণ্ঠ ভাঙা গলায় ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। ছেলেমেয়েদের চোখে অবুঝ ভয়ের ছাপ আছে, তবে বুঝতে পারছেন বাবা আর ফিরবেন না।

রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর গ্রামে দেখা যায়, রুপলাল দাসের বাড়িতে চলছে মাতম ও আহাজারি। আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ ভিড় জমিয়েছে।

রুপলাল দাস দুই শতক জমির ওপর বাঁশ ও টিনের সাদামাটা দুটি ঘরে বসবাস করতেন। ওই ছোট্ট ঘরেই তিনি স্ত্রী, বৃদ্ধ মা ও তিন সন্তানসহ ছয়জনের সংসার চালাতেন। তিনি পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রুপলালের বাড়িতে ছিল আনন্দের প্রস্তুতি। বড় মেয়ে নুপুরের বিয়ের দিন ঠিক করার ব্যস্ততা ছিল। ছোট দুই সন্তান ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়েও স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু রাতের এক ভুলের কারণে সব স্বপ্ন ভেঙে পড়ল।

বড় মেয়ে নুপুর (১৮) কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার বিয়ের দিন ঠিক করার কথা ছিল। প্রদীপ দাদা বাড়িতে আসার কথা ছিল। রাস্তা না চেনায় বাবা দাদাকে কাজীরহাট থেকে আনতে যান। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে বটতলায় স্থানীয়দের হাতে আটক হয়ে মারধর করা হয়। রাতে বাবা-দাদার রক্তাক্ত দেহ দেখে আমি শনাক্ত করি।’

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, নুপুরের বিয়ের দিন ঠিক করতে মিঠাপুকুর থেকে জামাই প্রদীপ দাস ভ্যানে করে তারাগঞ্জ আসেন। রাস্তা না চেনায় রুপলাল কাজীরহাটে তাকে নিতে যান। বটতলায় স্থানীয়দের সন্দেহে ‘ভ্যান চোর’ হিসেবে আটক হয় দুজন। বস্তায় পাওয়া তরলের গন্ধে স্থানীয়দের সন্দেহ বাড়ে এবং মারধর শুরু হয়।

গ্রামের প্রবীণ জয়নাল আবেদীন বলেন, রুপলাল দীর্ঘদিন জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন, কখনো কারও সঙ্গে বিরোধ করেননি। এই ধরনের হত্যা অমানবিক। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী হারিয়ে পরিবার দিশেহারা।

কুর্শা ইউনিয়ন সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, ‘রুপলালের মেয়ের বিয়ের কথা ছিল, তাকে হারিয়ে পরিবার অসহায়। আল্লাহই জানেন তারা কীভাবে চলবে।’

তারাগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্ত্রী ভারতী দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০-৭০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

উল্লেখ্য, শনিবার রুপলালের মেয়ে নুপুরের বিয়ের দিন ঠিক করতে মিঠাপুকুর থেকে জামাই প্রদীপ দাস বাড়ির দিকে রওনা হন। কাজীরহাটে পৌঁছে রুপলালকে ফোন করলে তিনি হাজির হন। পরে বটতলায় স্থানীয়রা ‘ভ্যান চোর’ সন্দেহে তাদের আটক করে পিটিয়ে আহত করে। রুপলালকে রাতে মৃত ঘোষণা করা হয়, প্রদীপ পরদিন ভোরে মারা যান।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments