Sunday, August 10, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়মালয়েশিয়ায় বিনা খরচে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ: ড. ইউনূসের সফরে ঐতিহাসিক সম্ভাবনা

মালয়েশিয়ায় বিনা খরচে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ: ড. ইউনূসের সফরে ঐতিহাসিক সম্ভাবনা

আগামীকাল ১১ আগস্ট বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব গ্রহণের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও ড. ইউনূসের দীর্ঘদিনের শুভাকাঙ্ক্ষী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশের প্রতি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। দুই নেতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবার দেশের জন্য বিশেষ সুফল বয়ে আনার সুযোগ তৈরি করেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, এ সফরে নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় ‘বিনা খরচে’ শ্রমিক পাঠানোর যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত হতে পারে।

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকের সর্বোচ্চ অনুমোদিত সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ হলেও কর্মরত শ্রমিক রয়েছে ২০ লাখের কিছু বেশি। ফলে সেখানে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় সমপরিমাণ শ্রমিক অবসর বা ফেরত যাওয়ার ফলে নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়। এই চাহিদা মেটাতে মালয়েশিয়া ১৪টি ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে শ্রমিক নেয়, যার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ছয় বছরে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে যেতে পারবে।

কিন্তু বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর বর্তমান পদ্ধতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ন্যায্য নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। ‘এমপ্লয়ার পে’ নীতিতে বলা হয়েছে—নিয়োগকর্তাই শ্রমিকের পাসপোর্ট, ভিসা, মেডিকেল, টিকিটসহ সব খরচ বহন করবে; শ্রমিকের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া যাবে না। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেপাল ও ভারতের শ্রমিকরা এ সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ শীর্ষ শ্রমিক প্রেরণকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ এ সুবিধা এখনও পায়নি, এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি তোলেনি।

যদি মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দেয়, তাহলে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা শ্রমিকদের পকেট থেকে ব্যয় হওয়ার বদলে দেশের ভেতরেই থাকবে। বরং নিয়োগকর্তার খরচে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আগাম বাংলাদেশে প্রবাহিত হবে, যা ছয় বছরে দাঁড়াবে ১৮ হাজার কোটিতে।

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন, যারা মাসে গড়ে ২৮ হাজার টাকা করে দেশে পাঠান। আগামী ছয় বছরে নতুন ১২ লাখ শ্রমিক গেলে রেমিট্যান্সে মাসে প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত যোগ হবে।

তবে এ সুযোগ বাস্তবায়নে দেশের অভ্যন্তরীণ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দ্বন্দ্ব, মানব পাচার ও অর্থ পাচারের মামলা এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করতে হবে। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান হলে বিনা খরচে শ্রমিক পাঠানোর ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া হবে না।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় এটিই হতে পারে ড. ইউনূসের সরকারের প্রথম ও শেষ মালয়েশিয়া সফর। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সফরে বিনা খরচে শ্রমিক পাঠানোর সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে তিনি দেশের লাখো প্রবাসীর হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে তুলবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments