রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে রূপলাল (৫০) ও তার ভাগ্নে জামাই প্রদীপ (৪৮) নিহত হয়েছেন। শনিবার (৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িহাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত রূপলাল কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বেলতলী বুড়িহাট রোডের বিলিং লেদার কোম্পানির পাশের একজন মুচি ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে তারাগঞ্জ বাজারের মতি টেইলার্সের সামনে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। প্রদীপ মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ছড়ান গ্রামের বাসিন্দা এবং রূপলালের ভাগ্নে জামাই।
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রূপলালের মেয়ে নুপুর সম্প্রতি এসএসসি পাস করেছে এবং আজ (১০ আগস্ট) তার বিয়ের দিন ঠিক করার কথা ছিল। বরের নাম কমল (ডিপজল), যিনি রংপুরের চন্দনপাট এলাকার লালচানের ছেলে।
বিয়ের আয়োজনের জন্য সামাজিক রীতির অংশ হিসেবে শনিবার তারা সৈয়দপুরের ভাটিখানা থেকে বাংলা মদ সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছিলেন। মূল সড়ক এড়িয়ে ভ্যানে করে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের ফরিদাবাদ মোড় সংলগ্ন বটতলা এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাদের ব্যাগে থাকা মদ দেখে নিয়ে ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা ‘চোর, চোর’ চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে দুজনকে বেধড়ক মারধর করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় রূপলাল ও প্রদীপকে বুড়িহাট স্কুল মাঠে ফেলে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলেই রূপলাল মারা যান। পরে পুলিশ প্রদীপকে উদ্ধার করে প্রথমে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। রবিবার ভোর ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রদীপেরও মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর এলাকায় যৌথ বাহিনীর টহল চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করছে।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম.এ. ফারুক বলেন, নিহত রূপলালের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে রূপলালের মরদেহ তারাগঞ্জ থানায় এবং প্রদীপের মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।