Monday, August 11, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকমার্কিন বাড়তি শুল্কে বিপর্যস্ত ভারতের পোশাক খাত, অর্ডার যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তানে

মার্কিন বাড়তি শুল্কে বিপর্যস্ত ভারতের পোশাক খাত, অর্ডার যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তানে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কের ধাক্কা ইতোমধ্যেই ভারতের তৈরি পোশাক খাতে পড়তে শুরু করেছে। শুল্ক কার্যকরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নামিদামী অনেক ব্র্যান্ড ভারত থেকে অর্ডার কমাচ্ছে বা সরাসরি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো কম শুল্কের দেশগুলোতে অর্ডার স্থানান্তর করছে।

রোববার ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানায়, তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুর—যা ভারতের নিটওয়্যার রাজধানী হিসেবে পরিচিত—সেখানকার রপ্তানিকারকেরা শুল্কের প্রভাব সরাসরি অনুভব করছেন। বহু ক্রেতা নিয়মিত অর্ডার দিলেও এখন তা স্থগিত বা বাতিল করছেন এবং কম শুল্ক সুবিধা পাওয়া দেশগুলোতে চলে যাচ্ছেন। যেখানে শুল্ক হার ভারতের তুলনায় অনেক কম, প্রায় ১৯ থেকে ৩৬ শতাংশের মধ্যে।

তিরুপ্পুরের এক রপ্তানিকারক জানান, তার প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত মার্কিন চালান পাকিস্তানে চলে গেছে। আরেকজন জানান, তার মার্কিন ক্রেতা গ্রীষ্মকালীন অর্ডারের আগে অপেক্ষা করতে বলেছেন। অনেক ক্রেতা আগেই ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক রপ্তানিকারকদের বহন করতে বলেছিল, আর এখন তা রাতারাতি দ্বিগুণ হয়েছে।

নতুন শুল্ক কাঠামোয় মূল শুল্কের পাশাপাশি জরিমানাসূচক অতিরিক্ত শুল্ক যুক্ত হয়েছে। ফলে কিছু নিটওয়্যার পোশাকে কার্যকর শুল্ক ৬৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আঞ্চলিক প্রতিযোগীদের তুলনায় ভারতীয় পণ্যের দাম ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি করে দিচ্ছে। রপ্তানিকারকেরা একে এখন “বাণিজ্যিক অবরোধ” হিসেবে দেখছেন।

ঠিক যখন তামিলনাড়ুর টেক্সটাইল খাত মার্কিন অর্ডার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছিল, তখনই এই শুল্ক চাপানো হয়। তিরুপ্পুর, কোয়েম্বাটুর ও কারুর ১২.৫ লাখের বেশি শ্রমিক বছরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করে। কয়েক সপ্তাহ আগেও ভারত–যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও চীন-মিয়ানমারের ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে মার্কিন ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা ছিল। সে আশায় অনেক রপ্তানিকারক নতুন যন্ত্রপাতিতেও বিনিয়োগ করেছিলেন।

তিরুপ্পুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম সুব্রাহ্মনিয়ান বলেন, “এটি বড় ধাক্কা। ক্রেতারা শুল্কের অংশ ভাগাভাগি করে নিতে বলছে, কিন্তু আমাদের মুনাফা মাত্র ৫-৭ শতাংশ। এভাবে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।” তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি প্রায় ৩০ শতাংশ হলেও ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো বাজার কিছুটা সুরক্ষা দিলেও ক্ষতি এড়ানো যাবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে আগামী কয়েক মাসে তিরুপ্পুর, কোয়েম্বাটুর ও কারুতে ১-২ লাখ শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে কোয়েম্বাটুর ও কারুর হোম টেক্সটাইল অর্ডারও স্থগিত হচ্ছে। সাউদার্ন ইন্ডিয়া মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কে সেলভারাজুর মতে, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদির মতো মৌসুমি পণ্যের অর্ডার বিলম্বিত হলে মৌসুম হারিয়ে যাবে।

তিনি ভারতের তুলা আমদানির ওপর ১১ শতাংশ শুল্ক ও জিএসটি-সংক্রান্ত অসঙ্গতির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, প্রতিযোগীদের তুলনায় এসব কারণে ভারতের খরচ ৬-৭ শতাংশ বেড়ে যায়। এছাড়া ব্রাজিল থেকে আসা তুলার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং মার্কিন তুলার শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার দাবি উঠেছে।

বর্তমানে ভারতের ৫০ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় নজিরবিহীন। বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫-৩৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের ২০-২১ শতাংশ এবং কম্বোডিয়ার মাত্র ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এই ব্যবধান মার্কিন বাজারে ভারতের প্রতিযোগিতা ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

সুব্রাহ্মনিয়ান সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ‘ল্যান্ডেড প্রাইস’ কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান স্থায়ীভাবে ভারতকে বাজার থেকে সরিয়ে দিতে পারে। তিনি তুলা ও কৃত্রিম তন্তুর ওপর শুল্ক ৫ শতাংশের নিচে নামানোর আহ্বান জানিয়েছেন, নইলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

সেলভারাজু শেষ করে বলেন, “মার্কিন বাজার এখনও আমাদের তুলা ও মান পছন্দ করে, কিন্তু নীতি ও রাজনৈতিক বাধা তাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments