মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের দুই পাশে গড়ে ওঠা তিন শতাধিক অবৈধ দোকান ও বসতবাড়ি মঙ্গলবার বুলডোজারের আঘাতে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে ও প্রশাসন। এতে প্রায় পাঁচ একর জমি উদ্ধার হয়। তবে এর দুইদিন আগেই অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ স্থানীয়ভাবে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করে।
সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার (রেলওয়ে ভূমি ও ইমারত) মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। অভিযানে সেনাবাহিনী, রেলওয়ে, জেলা পুলিশ, জিআরপি ও প্রশাসনের যৌথ বাহিনী অংশ নেয়।
আমরাইলছড়া রোড, সিন্দুরখান রোড, রেলওয়ে কলোনী ও সাতগাঁও বাজারের সব স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি একটি বিলাসবহুল বাসাও রেহাই পায়নি।
তবে অভিযানের আগে থেকেই স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন ছিল, স্থাপনা রক্ষায় বিপুল অঙ্কের টাকা ‘নিচতলার’ কর্মকর্তাদের হাতে যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, উচ্ছেদের ঘোষণার পর রেলওয়ের সার্ভেয়ার দীপক মল্লিক ও কানুনগো কাওসার হামিদ দোকানের অবস্থান ও আয়তন অনুযায়ী ঘুষের তালিকা প্রস্তুত করেন। এ তালিকায় সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ‘রেট’ ধরা হয়। টাকা দিলে উচ্ছেদের তালিকা থেকে দোকান বা বাড়ির নাম বাদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
দৈনিক আমার দেশ-এর হাতে থাকা একটি অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, ব্যবসায়ী রিপন স্বপন তার দোকান রক্ষায় দীপক মল্লিককে ৭ লাখ টাকার প্রস্তাব দেন। এ সময় দীপক তাকে ইঞ্জিনিয়ার রাসেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলেন।
অন্য এক রেকর্ডে গিয়াস উদ্দিন জানান, তার দুই সাটারের দোকান রক্ষায় তিনি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও ঘুষ নেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন। গিয়াসের দাবি অনুযায়ী, খাজনা বাকি থাকা রেলের দোকানদার কাজী দুলাল ও উমর আলী—প্রত্যেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এ ছাড়া রেলওয়ে কলোনী ভাঙা থেকে রক্ষা পেতে গেদা মিয়ার কাছে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার দাবি ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, এই অর্থ লেনদেনের বড় অংশই অভিযান শুরুর আগের দুইদিন—শনিবার ও রোববার—শ্রীমঙ্গলের রেলওয়ে রেস্ট হাউজে বসে হয়। কেউ সরাসরি, আবার কেউ মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেন।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার দীপক মল্লিক ও কানুনগো কাওসার হামিদ ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা জানান, কেবল বাণিজ্যিক লাইসেন্সের খাজনা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন এবং সাতগাঁও ছাড়াও মাইজগাঁও, শমশেরনগরসহ অন্যান্য এলাকার লোকজনও তাদের কাছে এসেছিলেন।