মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার সদস্যরা বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং ব্যবসা বন্ধসহ ৮ দফা দাবিতে কাফন মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, দুর্ঘটনার পর যাতে কোনো কর্মসূচি পালন না হয় সেজন্য মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও ধমকির ঘটনা ঘটছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) উত্তরার দিয়াবাড়ি গোল চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এই অভিযোগ উঠেছে।
নিহত ফাতেমার মামা লিয়ন মীর পরিবারের পক্ষে ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, দেশের সব মাইলস্টোনসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিহত শিক্ষার্থীর জন্য ৫ কোটি টাকা এবং আহতদের জন্য ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা। পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও নিহত পরিবারের জন্য ২ কোটি টাকা ও আহতদের জন্য ১ কোটি টাকা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
তাদের আরও দাবি, রানওয়ের কাছ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থান বা রানওয়ের অবস্থান পরিবর্তন করা হোক, কোচিং ব্যবসার মূল দায়ী হিসেবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা খাদিজাকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। এছাড়া, স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরিবারের কাছে প্রদর্শন এবং বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জনবসতির বাইরে সরিয়ে নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
মানববন্ধনে নিহত ফাতেমার মামা লিয়ন মীর বলেন, অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি শিক্ষকদের এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা চাই এই ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
অন্যদিকে, নিহত রাইসা মনির মা মীম আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়েটা আর ফিরবে না, তবে আর কোনো মা যেন এ ধরনের শোক না পায় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এই দুর্ঘটনার দায়ীদের বিচার না হলে আমরা কোথায় যাব? বাচ্চাকে আমি স্কুলে পাঠিয়েছিলাম পড়াশোনা শিখার জন্য, লাশ হয়ে আসবে এটা কল্পনাও করিনি। এই ব্যথা সারাজীবন বহন করতে হবে।’
অভিভাবক আব্দুল মান্নানও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা দুর্ঘটনা নয়, অবহেলার ফল। স্কুলের লোকজন আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে যেন আমরা দোষী। তারা আমাদেরকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। আমার বাড়ি এখন শুনশান, বইয়ের ব্যাগ, স্কুলের পোশাক সব আগের মতোই আছে, কিন্তু আমার সন্তান নেই। এই ভুল যেন আর না হয়।’
নিহত ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘোষিত ৮ দফা দাবি পূরণে তারা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।