ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর চা-বাগান, আনারসের ক্ষেত এবং পাহাড়-টিলা-হাওরে ঘেরা পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার চারটি আসনেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সম্মেলন, ব্যালটভিত্তিক নেতৃত্ব নির্বাচন এবং নিয়মিত সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন।
দীর্ঘ সময় ধরে চারটি আসন দখলে রাখা আওয়ামী লীগের প্রভাব এখন প্রায় বিলুপ্ত। ক্ষমতা হারানোর পর অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের জেলা মৌলভীবাজারে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় করেছেন তার ছেলে, সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। জেলা আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন ইতোমধ্যেই সদর ও রাজনগর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন সম্পন্ন করেছেন। আগস্টে বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার সম্মেলন এবং ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নিজ জেলা হওয়ায় এখানেও দলটির কার্যক্রম নিয়মিত চলছে। বিশেষত কুলাউড়া ও বড়লেখায় সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। ইতোমধ্যে চারটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
আসনভিত্তিক পরিস্থিতি
- মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী): বিএনপির তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী নাসির উদ্দিন মিঠু, শরিফুল হক সাজু এবং ব্যারিস্টার জহরত আবিদ চৌধুরী। জামায়াতের মাওলানা আমিনুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা লোকমান আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। বিএনপির ভোটভিত্তি থাকলেও জামায়াতের প্রমাণিত জনপ্রিয়তার কারণে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে। সংখ্যালঘু ভোটাররাই হতে পারেন নির্ণায়ক।
- মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া): বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে আছেন অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, শওকতুল ইসলাম শকু, ড. সাইফুল আলম চৌধুরী, সৈয়দ জুবায়ের আলী, অলিউর রহমান শিপলু, আব্দুল আহাদ ও আবু সাঈদ আহমদ। জামায়াতের প্রার্থী জেলা আমির প্রকৌশলী এম সাহেদ আলী হলেও গুঞ্জন আছে, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানও প্রার্থী হতে পারেন। এখানে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে।
- মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর): সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের আসনে তার ছেলে এম নাসের রহমান একক প্রার্থী হিসেবে সক্রিয়। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা আহমদ বিলাল। জামায়াতের আব্দুল মান্নান জনগণের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন।
- মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ): বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজি মুজিব) ও মহসিন মিয়া মধু। এই আসনে চা-শ্রমিক ও হিন্দু ভোটারদের সমর্থনই নির্ণায়ক। জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব। এনসিপি, হেফাজত ও গণঅধিকার পরিষদের নাম শোনা গেলেও মাঠপর্যায়ে তৎপরতা কম।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী জানান, সব আসনেই প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল ইসলাম বলেন, পাঁচদলীয় ইসলামী জোটভিত্তিক নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের দাবি, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে চারটি আসনেই তারা বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।