টানা বৃষ্টি এবং কৃষকের হাতে পেঁয়াজের মজুত কমে যাওয়া পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাতারাতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট। খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। দশ দিন আগে যে পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন মানভেদে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বলছেন, চাল, পোলট্রি, সবজি ও ডিমের পর এবার পেঁয়াজের দামও তাদের নাভিশ্বাস তোলার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, একের পর এক অজুহাত দেখিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। বাজারে নিয়ন্ত্রণের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, বছরের এই সময় কিছুটা দাম বেশি থাকা স্বাভাবিক, তবে এবার পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক। চাল, ডাল ও তেলের দামও ইতিমধ্যেই ভোক্তাদের চাপের মধ্যে রেখেছে, আর পেঁয়াজের বাড়তি দাম নতুন সমস্যা যোগ করেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম কয়েক দিনের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সূত্রাপুর বাজারের ক্রেতা শাহিন আলম বলেন, “যে পেঁয়াজ কয়েকদিন আগে ৪৫ টাকায় কিনেছি, এখন সেটি দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটকে ধরা হচ্ছে না কেন?”
শ্যামবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আমির হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলেন ২২০ টাকায়, এখন চাওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। তিনি অভিযোগ করেন, “মজুতদার ও বেপারিরা ইচ্ছা করে দাম বাড়াচ্ছে, সামান্য বৃষ্টিকেও অজুহাত বানিয়ে পকেট ভারী করছে।”
ব্যবসায়ীরা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বেশি দামে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে, অন্যথায় ব্যবসা চলে না। কারও ব্যবসা কমে গেলে খুচরা বিক্রেতাদের ওপর ক্রেতারা ক্ষোভ দেখান।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়ৎদাররা বলেন, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় পুরো বাজার দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল। কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, পাবনা ও উত্তরবঙ্গ থেকে পেঁয়াজ আনা হলেও ভারী বর্ষণের কারণে সরবরাহ কমে গেছে, যা দাম বাড়াতে বাধ্য করছে।
ফরিদপুরে এক সপ্তাহে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম প্রায় এক হাজার টাকা বেড়েছে; গত সপ্তাহে মণপ্রতি ১,৫০০ টাকা ছিল, এখন বিক্রি হচ্ছে ২,৫০০-২,৬০০ টাকায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “কৃষকের হাতে পেঁয়াজের মজুত কমে গেলে কমিশন এজেন্ট, আড়ৎদার, বেপারি ও মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়াতে শুরু করে। আগে ভোক্তা অধিকার প্রতিদিন তদারক করত, এখন তা নেই। সিন্ডিকেট সেই সুযোগ নিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাজারে অভিযান মানে কয়েকজন পুলিশ দিয়ে ঘোরা নয়। কোথায় কীভাবে সিন্ডিকেট কাজ করছে, তা খুঁজে ব্যবস্থা নিতে হবে। চাল, ডাল, পোলট্রি, সবজি, ডিম—সবকিছুর দাম বেড়েছে। ভোক্তারা কী খাবে?”