সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর তীরে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র একসময় স্বচ্ছ নীল পানি, পাহাড়ি ঝরনা ও সাদা পাথরের সমারোহে ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করত। কিন্তু অবৈধ পাথর উত্তোলনের কারণে বর্তমানে সেই মনোমুগ্ধকর স্থান মরুভূমির মতো নির্জীব হয়ে পড়েছে। নদীর তলদেশ থেকে উৎসমুখ পর্যন্ত বড় বড় পাথর সরিয়ে নেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্ত ও বালুচর, যা ধলাই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও পুরো বাস্তুতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করেছে।
বর্তমানে নৌকায় ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বালুচর ও পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন। ময়মনসিংহ থেকে আসা পর্যটক শারমিন আক্তার বলেন, “আগে এখানে এসে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে জায়গাটিকে কেউ ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে।” ঢাকা থেকে আসা আহমেদ ইমতিয়াজও একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে পরিবেশের এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। প্রশাসন আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে হয়তো সৌন্দর্য বাঁচানো যেত।”
পরিবেশকর্মী মোহাম্মদ রাশেদ জানান, অবৈধ পাথর উত্তোলন ধলাই নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও জীববৈচিত্র্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা আর আগের অবস্থায় ফিরবে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা বলেন, “সাদা পাথর শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, এটি জাতীয় সম্পদ ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। কিন্তু সরকারের ব্যর্থতায় এই সম্পদ ধ্বংসের পথে। অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলনকারীদের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এবং বালু ও পাথর উত্তোলন আইন ২০১০ অনুযায়ী গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে পাথর লুট চলছে। যদিও মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালিত হয়, তবে তা স্থায়ী সমাধান আনতে পারেনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে কাজ চলছে।