যশোরে টানা ভারি বর্ষণে মৎস্যখাতে রেকর্ড পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় মাছের ঘের, পুকুর ও বিল তলিয়ে গিয়ে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় চাষিদের মতে, গত চার দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় ক্ষতি, যা জেলার উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। তারা বলছেন, এই বিপুল আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা জরুরি।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, জেলার ৮ উপজেলায় মোট ৬ হাজার ২১৯টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩,১২৭টি, অভয়নগরে ৩৪০টি, ঝিকরগাছায় ৩৬০টি, মণিরামপুরে ৫৪০টি, কেশবপুরে ২৬০টি, শার্শায় ১,০৩২টি, চৌগাছায় ১৬০টি এবং বাঘারপাড়ায় ২২০টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা ৫,৪০৮ জন এবং মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৪,৭৮১ হেক্টর।
ভারী বর্ষণে ডুবে গেছে প্রায় ৫,৩৪১ টন মাছ এবং ৮ কোটি ৩০ লাখ পোনা। এতে মাছের ক্ষতি হয়েছে ১০৪ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং পোনার ক্ষতি ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। পাশাপাশি অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
ফিরোজ মৎস্য হ্যাচারির মালিক ফিরোজ খান বলেন, “১৯৭১ সালের পর এই প্রথম এমন ভারি বর্ষণ দেখলাম। ক্ষতির পরিমাণ কল্পনার বাইরে চলে গেছে। যদি এভাবে কয়েক বছর চলতে থাকে, চাষিরা মাছ চাষে আগ্রহ হারাবে।” তিনি অভিযোগ করেন, কৃষিতে সরকারি প্রণোদনা থাকলেও মৎস্যখাতকে অবহেলা করা হচ্ছে।
যশোর জেলা মৎস্য চাষি সমিতির সভাপতি জাহিদুর গোলদার জানান, “খাবারের দাম বেশি, কখনও অতিবৃষ্টি, আবার কখনও খরা—সব মিলিয়ে গত ৮-১০ বছর ধরে চাষিরা বিপাকে। মাছের খাবার উচ্চ দামে কিনতে হচ্ছে, আবার কৃষি থেকে শিল্পখাতে উন্নীত করায় বিদ্যুৎ বিলও বেড়েছে। আগে যেখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ছিল ২ টাকা ৪৫ পয়সা, এখন দিতে হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। এবারের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা দরকার।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম জানান, এবারের ক্ষতি বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ। এ কারণে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করা হয়েছে, যদিও এখনো আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে বিদ্যুতের দাম কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যশোর জেলা মৎস্য অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছিল, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার টন। ফলে ১ লাখ ৮০ হাজার টনেরও বেশি মাছ উদ্বৃত্ত থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়েছিল