নরসিংদী জেলার সাবেক যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেতা শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে দুদকের মামলায় আদালত সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু তাহের রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, আসামিদের ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
পাপিয়া ও তার স্বামীর আইনজীবী শাখাওয়াত উল্লা ভুইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আসামিরা ইতোমধ্যে আদালতের দেওয়া সাজা ভোগ করেছেন, তাই তাদের পুনরায় কারাগারে যেতে হবে না। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মামলাটির প্রক্রিয়া চলাকালীন ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করা হয়। মামলাটি ২০২০ সালের ৪ আগস্ট দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ দায়ের করেন এবং তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেন।
দুদকের অনুসন্ধানে প্রকাশ, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাপিয়া ওয়েস্টিন হোটেলের ২৫টি রুমে অবস্থান করে রুম-নাইট, রেস্তোরাঁর খাবার, মদ, স্পা, লন্ড্রি, মিনি বার ফুড বাবদ মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬১ টাকা খরচ করেছেন। এছাড়া হোটেলে অবস্থানকালে প্রায় ৪০ লাখ টাকার শপিং করেছেন, যা বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি। দুদকের অনুসন্ধানে মোট ছয় কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাসা ভাড়া বাবদ ৩০ লাখ টাকা, গাড়ির ব্যবসায় এক কোটি টাকা, নরসিংদীর কেএমসি কার ওয়াশ সলিউশনে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে জমাকৃত ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৮ টাকার বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হওয়া।
এর আগে, ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তার স্বামীকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা, বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা এবং গুলশান থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে এক মামলা দায়ের করা হয়। পরে দুদক পাপিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেন।
অর্থ পাচারের মামলায় গত বছর ২৫ মে পাপিয়ার চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। তবে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী, সহযোগী সাব্বির খন্দকার, শেখ তায়িবা নূর ও জুবায়ের আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান তারা।