আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অছিয়ত ছিল, খুলনার বসুপাড়ায় তার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর জন্য মসজিদের কাছ থেকে দুটি কবরের জায়গাও কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সশস্ত্র বাধার কারণে খুলনায় দাফন সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে পিরোজপুরে সমাহিত করা হয়। ফলে ১৪ আগস্ট এলেই খুলনার সাঈদীভক্তরা গভীর বেদনায় ডুবে যান।
২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এই জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা। মৃত্যুর পর মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি বৈঠক করে অছিয়ত অনুযায়ী দাফনের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এশার নামাজ শেষে মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা হতেই রাত ১০টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা মাদরাসার সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান, হুমকি ও উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তোলে। নিরাপত্তার জন্য মাদরাসার ফটক বন্ধ করা হলেও তারা গেটে আঘাত করে। ভেতরে থাকা প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী আতঙ্কে উপরের তলা ও ছাদে আশ্রয় নেয়। রাত ১২টার পর তারা সরে যায়, তবে পুলিশ পুরো রাত পাহারা দেয়।
সেই সময়ের সংবাদ ও ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু, সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, এবং কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু জানান, জমিটি তার পরিচিত এক সাংবাদিক পরিবারের মালিকানাধীন এবং কবর না দেওয়ার জন্য থানায় জিডিও করা হয়।
মসজিদ কমিটির সভাপতি শেখ হাফিজুর রহমান মনি বলেন, বসুপাড়াবাসী এক ভীতিকর রাত কাটিয়েছে। সশস্ত্র লোকজনের মিছিল ও ভাঙচুরে এখনও অনেকেই আতঙ্কে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলে শটগান, পিস্তল, হকিস্টিক, রামদা ও চাপাতি ছিল প্রচুর। পরে পিরোজপুরে দাফনের সিদ্ধান্ত আসায় তারা ফিরে যায়।
শেখ হাসিনার পতনের পর জড়িত আওয়ামী নেতারা আত্মগোপনে চলে যান, কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, এবং অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। খুলনার মাদরাসা, হেফজখানা ও মসজিদ বর্তমানে দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া মাদানিয়া ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শামীম বিন সাঈদী জানান, তার বাবার ইচ্ছা ছিল খুলনায় দাফন হওয়া, কিন্তু সরকার তা চায়নি, কারণ এতে মানুষের ভিড় বাড়ত এবং তিনি বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকতেন। কবরের জায়গা এখনও আছে, যা ভবিষ্যতে স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।