জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় বন্যহাতি প্রবেশ করে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত কয়েকটি দলে বিভক্ত শতাধিক হাতি এসব এলাকায় ঢুকে অন্তত ২৫টি গ্রামে তাণ্ডব চালায়। বৃহস্পতিবারও ওই এলাকায় বন্যহাতির উপস্থিতি দেখা গেছে। স্থানীয়রা আতঙ্ক ও উতকণ্ঠায় ভুগছেন।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৫ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত বকশীগঞ্জ, শ্রীবরদী ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে ৭০ জন নিহত ও প্রায় এক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। একই সময় মানুষের হাতে মারা পড়েছে ৩৯টি হাতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলার হাতিবেড়কোনা, শোমনাথপাড়া, সাতানিপাড়া, গারোপাড়া, বালুঝরি, দিঘলাকোনা, লাউচাপড়া, চন্দ্রপাড়া ও শেরপুরের কর্নঝোড়া, বাবলাকোনা, রাজারপাহাড়, ঝোলগাও, বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গা জল, কাড়ামারা হারিয়েকোনা, পাঁচমেঘাদলসহ সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি এসব গ্রামে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন। কয়েকদিন ধরে হাতির আক্রমণে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতির আক্রমণ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক কৃষক জমি ফাঁকা রেখে চাষ করতে পারছেন না।
জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গভীর বনাঞ্চলের হাতির দল প্রায়ই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে চলে আসে। তারা ধান, কলা, আদা, হলুদসহ মৌসুমী ফসল খেয়ে ফেলে এবং বাগানের গাছপালা ভেঙে দেয়। কিছু এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দিঘলাকোনা গ্রামের পিটিসং সাংমা বলেন, রাতভর মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে এবং বাঁশের ফটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবুও কিছু হাতি গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করেছে। আমরা কলা, আদা, হলুদ ও ধান চাষ করি। হাতির পাল এলে শুধুই ফসল নয়, ঘরবাড়িতেও হামলা চালায়।
লাউচাপড়া গ্রামের শামছুল হুদা বলেন, প্রতি বছর বন্যহাতির কারণে আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে হাতিরা লোকালয়ে চলে আসে। তখন ফসল ও গাছপালা নষ্ট হয়।
বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাপ জামাল জানান, কয়েকদিন ধরে হাতির আক্রমণে এলাকাবাসী বড় সমস্যার মধ্যে পড়েছে। বন্যহাতির আক্রমণ কখন, কোথায় হবে তা বলা যায় না। স্থায়ী সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ইতোমধ্যে বন্যহাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রামে থাকা মানুষদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।