উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৯টায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিপৎসীমার ৫২.১৫ সেন্টিমিটার থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে পানির প্রবাহ রেকর্ড করে।
এর আগের দিন (১৩ আগস্ট) সকালে পানি প্রথমে ৭ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে, পরে কমে ৪ সেন্টিমিটারে নেমে আসে। তবে রাতের বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে ভোরের দিকে তা আবার বেড়ে ১১ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়।
টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিপৎসীমার ওপরে পানি প্রবাহিত থাকায় লালমনিরহাট ও নীলফামারীর বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ৪৫টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে রোপা আমনসহ নানা ফসলের জমি।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রাম এবং চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলেও পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া, পলাশী, ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, জুলাইয়ের শেষ দিকে এবং আগস্টের শুরুতে দুই দফা পানি বৃদ্ধির পর এবার তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তারা ত্রাণের বদলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান চান।
আদিতমারীর গোবর্ধন গ্রামের মতিয়ার রহমান জানান, বন্যার কারণে সাত দিন ধরে রান্না করা সম্ভব হয়নি। গবাদিপশু ও পরিবারকে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছে।
পানিবন্দি মর্জিনা বেগম বলেন, গরু-ছাগলের খাবার জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছেন। সামান্য ত্রাণ পেলেও স্থায়ী সমাধান চান।
কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, বারবার বন্যায় ধান, পাট, মাছসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।
ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মানুষ আতঙ্কে আছেন। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তার চ্যানেল বের হয়ে আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে, স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে তা বন্ধের চেষ্টা করছেন।
পাউবো জানিয়েছে, আগামী দুই দিন ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের সব ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। চলতি মৌসুমে এটি তিস্তায় তৃতীয় দফা বন্যা।