গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল, যা জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র, এখন কার্যত ‘রেফার্ড স্টেশন’-এ পরিণত হয়েছে। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল চিকিৎসক, আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ নার্স ও জরুরি ওষুধের চরম সংকটে ভুগছে। ফলস্বরূপ সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। শুধু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রায় ১,৬০০ রোগীকে রেফার্ড করা হয়েছে, আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২০০ জনের।
২৫০ শয্যার নাম, ১০০ শয্যার বাস্তবতা
২০১৬ সালে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যায় উন্নীত হয় এবং ২০২০ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু এখনো চলছে ১০০ শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে। সরকারি তালিকায় থাকা ৪৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন। দীর্ঘদিন ধরে ২৫টি চিকিৎসক পদ শূন্য, যার মধ্যে মেডিসিন, নাক-কান-গলা, শিশু, চক্ষু ও চর্মরোগ বিভাগে একাধিক পদ শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি, ১৯১টি প্রশাসনিক ও সহায়ক কর্মীর পদের মধ্যে ৫২টি খালি।
জরুরি বিভাগের করুণ দশা
জরুরি বিভাগে নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ, পর্যাপ্ত অক্সিজেন কিংবা ট্রমা কিট। অ্যাম্বুলেন্স আছে মাত্র একটি, যা প্রায়শই অচল থাকে। জটিল রোগী এলেই প্রথম পরামর্শ—“রংপুরে রেফার্ড করতে হবে।” প্রতিমাসে গড়ে ২৬০ জনের বেশি রোগীকে বাইরে পাঠানো হয়, যা দৈনিক গড়ে প্রায় ৯ জন। অনেক সময় এমন রোগীকেও পাঠানো হয়, যাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব ছিল।
বহুতল ভবন, তবু চালু নয়
২০১৮ সালে ৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ তলা ভবন নির্মাণ করা হলেও, ২০২২ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পরও এটি এখনো চালু হয়নি। ফলে পুরনো ৫০ শয্যার ভবনে ৩০ লাখ মানুষের চিকিৎসা চলছে।
রোগীদের দুর্ভোগ
রেফার্ডের কারণে রোগী ও তাদের পরিবারের সময়, অর্থ ও মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে। অনেকে পথেই মারা যাচ্ছেন, কেউ হাসপাতালে পৌঁছে মৃত্যুবরণ করছেন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, চিকিৎসক সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতাল কার্যত নামমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
প্রশাসনের ব্যাখ্যা
হাসপাতালের আরএমও আসিফ উর রহমান স্বীকার করেছেন, ২৫০ শয্যার ঘোষণার পরও এখানে জনবল দেওয়া হয়েছে ১০০ শয্যার জন্য। চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না, তাই রেফার্ড করতে হয়। বহুতল ভবনটি চালু করতে প্রয়োজন জনবল ও সরঞ্জাম, তবে কবে চালু হবে তা তিনি জানাতে পারেননি।
সাধারণ মানুষের দাবি
স্থানীয়দের একটাই দাবি—‘রেফার্ড নয়, চিকিৎসা চাই’। তারা চান, সব বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসক নিয়োগ, জরুরি বিভাগের উন্নয়ন এবং বহুতল ভবনটি দ্রুত চালু করা হোক, যাতে রেফার্ডের প্রবণতা বন্ধ হয় এবং গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল সত্যিকারের চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত হয়।