Sunday, August 17, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিক“রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতাই ইউক্রেনের জন্য উত্তম পথ: ট্রাম্প”

“রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতাই ইউক্রেনের জন্য উত্তম পথ: ট্রাম্প”

রাশিয়াকে একটি “বৃহৎ শক্তি” আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত মস্কোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করা, কারণ “রাশিয়া শক্তিশালী, আর ইউক্রেন সেই অবস্থানে নেই।”

সম্প্রতি আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক শেষে এমন খবর পাওয়া গেছে যে, পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছেন যদি কিয়েভ পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল হস্তান্তর করে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইতোমধ্যে ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যার মধ্যে দোনেৎস্কের প্রায় ৭৫ শতাংশও অন্তর্ভুক্ত। এ প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ শেষ করতে শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, বরং একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি জরুরি। তার ভাষায়, “যুদ্ধবিরতি অনেক সময় ভঙ্গ হয়, তাই স্থায়ী চুক্তিই সমাধান।”

অন্যদিকে জেলেনস্কি মনে করেন, রাশিয়ার আগ্রাসী অবস্থানের কারণেই শান্তি প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, “হত্যাযজ্ঞ থামানো ছাড়া যুদ্ধ থামানো সম্ভব নয়।” যদিও তিনি সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

এই বৈঠক অনেকের মনে করিয়ে দিয়েছে গত ফেব্রুয়ারির সেই সময়কে, যখন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনি পুতিনকে নিয়ে তিন পক্ষের বৈঠক আয়োজনের কথাও ভাবছেন।

ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা ইউক্রেনকে সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল জানিয়েছেন, ইউরোপীয় নেতারাও ওয়াশিংটনের বৈঠকে অংশ নিতে পারেন।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ চালাচ্ছে এবং ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত, যেখানে দুই পক্ষের লাখো মানুষ হতাহত হয়েছে, যার মধ্যে বহু সাধারণ ইউক্রেনীয়ও রয়েছে।

ট্রাম্পের বক্তব্য মস্কোর অবস্থানের সঙ্গে অনেকাংশে সাদৃশ্যপূর্ণ। পুতিনও বলে আসছেন, দুই পক্ষের অবস্থান এত ভিন্ন যে সমাধান সহজ হবে না। তিনি ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা রোধের দাবিও পুনরায় তুলেছেন।

ফক্স নিউজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ও পুতিন ভূখণ্ড হস্তান্তর ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং “প্রাথমিকভাবে সমঝোতায় পৌঁছেছেন।” তার ভাষায়, “আমরা চুক্তির কাছাকাছি চলে এসেছি, তবে এতে ইউক্রেনকে রাজি হতে হবে।”

প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কির উচিত সমঝোতায় যাওয়া, কারণ “রাশিয়া একটি শক্তিশালী দেশ, ইউক্রেন তা নয়।”

তবে জেলেনস্কি বারবারই স্পষ্ট করেছেন, সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ইউক্রেন কোনো ভূখণ্ড ছাড়বে না। দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরগুলোকে তিনি রাশিয়ার অগ্রযাত্রা রোধের মূল প্রতিরোধক হিসেবে দেখছেন।

তিনি আরও জানান, যুদ্ধ-পরবর্তী স্থায়ী শান্তির জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অপরিহার্য, এবং এ বিষয়ে ট্রাম্প ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিও বলেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ন্যায়সঙ্গত শান্তিচুক্তির জন্য অপরিহার্য। অন্যদিকে পুতিনও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা বলেছেন, যদিও তিনি বিদেশি সেনা জড়িত থাকার বিপক্ষে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় পর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বৈঠকের এক সপ্তাহ আগেই ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments