Sunday, August 17, 2025
spot_imgspot_img
Homeবিশেষ সংবাদকলকাতায় আওয়ামী লীগের গোপন অফিস: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে নতুন হুমকি

কলকাতায় আওয়ামী লীগের গোপন অফিস: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে নতুন হুমকি

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের সময়ে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও অপশাসনের মাধ্যমে দেশকে এক ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যায়। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে জনতার রক্তঝরানো আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ও তার দল ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সাধারণ মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। ফলে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এখন কেবল অপ্রাসঙ্গিকই নয়, বরং নিষিদ্ধ শক্তি। কিন্তু ভারতের আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা আবারও বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে। এজন্য ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় কলকাতায় গোপন অফিস চালু করেছে আওয়ামী লীগ।

মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ভবনে ৫০০-৬০০ স্কয়ারফুটের একটি ফ্ল্যাটে গোপনে পার্টি অফিস পরিচালনা করছে তারা। এখানে কোনো সাইনবোর্ড নেই, শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধুর ছবি নেই, এমনকি দাপ্তরিক ফাইলও নেই। পুরো কার্যক্রম চলছে একধরনের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড অপারেশন’-এর মতো। সেখানে আশ্রিত আওয়ামী নেতারা রাজনৈতিক বৈঠক করছেন, ভার্চুয়ালি নির্দেশনা দিচ্ছেন, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে সংগঠন চালাচ্ছেন। সর্বশেষ ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা দলীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও জানা যায়।

ভারতে এই রাজনৈতিক আশ্রয় শুধু আত্মরক্ষার কৌশল নয়, বরং একটি বৃহৎ ভূরাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ। ভারতের প্রত্যক্ষ অনুমোদন ও গোয়েন্দা তদারকির মাধ্যমেই এই অফিস চালু রাখা সম্ভব হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত এখনো সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং আওয়ামী লীগকে তাদের ‘প্রক্সি শক্তি’ হিসেবে ব্যবহার করছে।

বর্তমানে কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ২০০ জন আওয়ামী ঘরানার প্রভাবশালী ব্যক্তি অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, মেয়র, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তারাও। কেউ সপরিবারে, কেউবা গোপনে ভাড়া করা ফ্ল্যাটে থাকছেন। দলটির কার্যক্রম চালাতে অর্থায়ন করছে কিছু ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’, তবে সেই অর্থায়ন কতটা স্বচ্ছ, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশের জনগণ মনে করছে, এই কার্যক্রম কেবল রাজনৈতিক নির্বাসন নয়, বরং ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির অংশ। সীমান্ত হত্যা, নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বঞ্চনা, বাজার দখল এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ—এসবের ধারাবাহিকতায় কলকাতার এই অফিস এক নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এটি কেবল আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এক কৌশল। গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার অনুযায়ী কোনো দেশের রাজনৈতিক দল অন্য দেশে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম চালাতে পারে না। অথচ ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কলকাতার এই অফিস চালু থাকা প্রমাণ করে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছে, গণতন্ত্র নয়।

👉 কলকাতায় আওয়ামী লীগের এই গোপন কার্যক্রম এখন বাংলাদেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—প্রতিবেশী দেশ ভারত এখনো আমাদের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় এবং তাদের লক্ষ্য ক্ষমতাসীন এক অনুগত শক্তিকে আবারও প্রতিষ্ঠা করা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments