দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ও আসিফ মাহতাব উৎসকে প্রকাশ্যে হত্যার আহ্বান জানানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ২৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, সাম্প্রতিক এই ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং দেশের সামাজিক স্থিতি, আইনের শাসন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাফওয়ান চৌধুরী রেবিল নামের এক ব্যক্তি ‘Antarctica Chowdhury’ নামে পরিচালিত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আইইউবি-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লেকচারার আসিফ মাহতাব উৎসকে লক্ষ্য করে ভয়ঙ্কর ও অমানবিক ভিজ্যুয়ালসহ পোস্ট দেওয়া হয়, যেখানে শিরচ্ছেদকৃত মাথা ও বিকৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রদর্শনের মাধ্যমে হত্যার সরাসরি উসকানি দেওয়া হয়। এই কর্মকাণ্ড দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৫০৩ এবং সাইবার সুরক্ষা আইন ২০২৫ এর ধারা ২৬ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই শিক্ষক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
শিক্ষকরা বলেন, ড. সরোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া, ডেঙ্গু ও শিশুদের স্থূলতা বিষয়ে গবেষণা এবং জনসচেতনতায় কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, আসিফ মাহতাব উৎস নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রিয় বক্তা হিসেবে পরিচিত।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, একজন চরমপন্থীর পক্ষ থেকে দেশের দুইজন খ্যাতিমান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হত্যার প্ররোচনা দেওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি কেবল ব্যক্তিগত জীবনের নিরাপত্তা নয়, বরং মুক্ত মতপ্রকাশ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্যও হুমকি স্বরূপ। এমন ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ করা হয়, সাফওয়ান চৌধুরী রেবিল, যিনি নিজেকে ‘সাহারা চৌধুরী’ নামে পরিচয় দিয়ে ট্রান্সনারী হিসেবে উপস্থাপন করতেন, তিনি সিলেটের মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের মতে, শুধু বহিষ্কার যথেষ্ট নয়, তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
শিক্ষকরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেউ আর করার সাহস না পায়।
বিবৃতিতে ২৫০ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৫ জন প্রফেসর, ৪৪ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ৬৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং ৬৬ জন লেকচারার রয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন, বুটেক্সের ১৪ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন, বুয়েটের ২ জন এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল আলম, বুটেক্সের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল ইসলাম, ডুয়েটের অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামীমা তাসনীম, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আরিফ মোর্শেদ খান, মেডিকেল কলেজ ফর ওমেন অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মিলিভা মোজাফফর, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ইফতেখারুল ইসলাম ইমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খো. লুৎফুল এলাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারীসহ আরও অনেকে।