টেলিভিশন নাটকের জগতে যাহের আলভী এখন এক পরিচিত নাম। মিষ্টি হাসি, দৃঢ় দৃষ্টি আর চরিত্রে প্রাণ সঞ্চারের দক্ষতা তাকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। তবে এ অবস্থানে পৌঁছানো একেবারেই সহজ ছিল না। মধ্যবিত্ত জীবনের সীমাবদ্ধতা, সংগ্রাম আর নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের সফলতার গল্প। লিখেছেন রাজু আহমেদ।
শৈশব ও বেড়ে ওঠা
আলভীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার পুরান ঢাকায়। যদিও তার আদি নিবাস নরসিংদী।
রাগী কি না সে প্রশ্নে
অনেকে তাকে রাগী মনে করেন। এ বিষয়ে আলভীর সোজাসাপ্টা জবাব—“আমি রাগী নই। বরং বছরে একদিন হয়তো রাগ করি। আমি বেশি শুনতে ভালোবাসি, কথা বলি কম। এজন্য হয়তো কেউ আমাকে রাগী ভাবে। তবে আমার কাছে ভালো বক্তার চেয়ে ভালো শ্রোতা হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন
নিজের ছেলে জুনিয়র আলভীর ভবিষ্যৎ নিয়েও আশা প্রকাশ করলেন তিনি। বললেন—“আমি চাই আমার ছেলেও নায়ক হোক। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক-নায়কের ধারা এখন কমে গেছে। হলিউড-বলিউডে যেমন দেখি, বাংলাদেশেও ফিরিয়ে আনতে চাই। আমার ছেলে যদি চায়, আমি চাই সে আমার থেকেও বড় নায়ক হোক।”
মিডিয়াতে টিকে থাকার রহস্য
আলভীর মতে, “শোবিজে টিকে থাকার একমাত্র উপায় হলো মাটি কামড়ে পড়ে থাকা। পার্সোনালিটি জরুরি, তবে লক্ষ্য নির্ধারণই আসল বিষয়। আমার লক্ষ্য ছিল প্রথম সারির নায়ক হওয়া আর সেটা ধরে রাখা। দিনশেষে লেগে থাকতে হয়, বিকল্প কিছু নেই।”
স্বপ্ন ও সাফল্য
তিনি জানান, প্রথম সারির হিরো হয়েছেন কি না, সেটা সময়ই বলবে। তবে নিজের পথে হাঁটতে পারা ও স্বপ্ন দেখতে পারাটাই তার কাছে বড় পাওয়া।
অভিনয়ের বদলে ব্যবসা?
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হওয়ায় পুঁজি ছিল না। টিউশনি করে দিন কাটাতাম। গায়ক হওয়ার ইচ্ছে নিয়েই শোবিজে এসেছিলাম, কিন্তু ভাগ্যের খেলায় নায়ক হয়ে গেলাম।”
নিজেই প্রযোজক হওয়ার কারণ
আলভীর ভাষায়, “অনেক প্রযোজক আছেন, কিন্তু তারা তাদের চিন্তা চাপিয়ে দেন। আমি প্রোডিউস করি কারণ আমার কিছু স্বপ্ন ও গল্প আছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। এর মাধ্যমে অনেককে কর্মসংস্থান দিতে পারি, সেটাই আমাকে আনন্দ দেয়।”
জনপ্রিয়তা ও ভিউ রেকর্ড
সাম্প্রতিক সময়ে তার তিনশর বেশি নাটক মিলিয়ন ভিউ ছাড়িয়েছে। আলভীর কাছে এটি বিশাল প্রাপ্তি।
ওটিটি ও সিনেমা নিয়ে পরিকল্পনা
তিনি মনে করেন, ওটিটির কাজের ধরণ তার সঙ্গে মানানসই নয়। তবে সিনেমায় কাজের ব্যাপারে শিগগিরই ঘোষণা আসবে বলে জানান তিনি।
পাকিস্তানি কনটেন্টের বিরোধিতা
পাকিস্তানি সিরিয়াল বাংলাদেশে প্রচারের বিরোধিতা প্রসঙ্গে আলভী বলেন, “আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, একাত্তরে বিশ্বাস করি। তাই বলেছি, যেসব চ্যানেল পাকিস্তানি সিরিজ বা নাটক চালাবে, সেখানে আমি অভিনয় করব না। আমার অভিনয় না করলে হয়তো চ্যানেল বন্ধ হবে না, কিন্তু এটা আমার প্রতিবাদ। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত কোনো কাজ জীবিত অবস্থায় আমি করব না।”