মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর দেশটিতে ভোট গ্রহণ শুরু হবে বলে সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানায়। তবে দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিরোধীদের প্রতিরোধের মধ্যে এই নির্বাচনের ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক পর্যবেক্ষক একে “প্রহসনমূলক নির্বাচন” বলে অভিহিত করেছেন।
২০২১ সালে সেনাবাহিনী গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। তখন সেনারা নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুললেও তার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে এবং এখনও গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে সেনাদের কাছ থেকে অনেক এলাকা দখল করে নিয়েছে। এসব গোষ্ঠী নিজেদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। তিনি যেকোনওভাবে প্রেসিডেন্ট, সামরিক প্রধান বা নতুন কোনো পদে থেকে প্রভাব বজায় রাখতে চাইবেন।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও নির্বাচনী আয়োজনকে “প্রতারণামূলক” বলে উল্লেখ করেছে। তারা বলছে, এ পদক্ষেপ কেবল সামরিক শাসনকে নতুন আঙ্গিকে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা। গৃহযুদ্ধের কারণে এখন পর্যন্ত হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন, ৩৫ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত এবং অর্ধেকের বেশি জনগণ নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছেন।
জান্তা সরকার দাবি করছে, দেশে সংঘাত শেষ করার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। অস্ত্র জমা দিলে নগদ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক আইনি পরিবর্তনে নির্বাচনের বিরোধিতা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং ভোটকেন্দ্র ধ্বংস বা নির্বাচনকর্মীদের ক্ষতি করলে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান করা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর প্রথমদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও ২০২৩ সালের শেষ দিকে বিরোধী গোষ্ঠীগুলো সমন্বিত আক্রমণে একাধিক এলাকা দখল করে। জবাবে জান্তা বিমান হামলা ও বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ চালু করে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু এলাকায় সেনারা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
গত বছর নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক জনশুমারিতে দেখা যায়, প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ফলে পর্যবেক্ষকদের মতে, সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব।