জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর সহযোগিতায় নরওয়ের অত্যাধুনিক সামুদ্রিক গবেষণা জাহাজ আর ভি ড. ফ্রিডজোফ নানসেন আগামী ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসব্যাপী বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ চালাবে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বৈচিত্র্যময় জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এ জরিপের মাধ্যমে মৎস্যসম্পদের মজুত নির্ধারণ, সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হবে। যা টেকসই মৎস্য আহরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এবারের অভিযানে বাংলাদেশের ১৩ জন জাতীয় গবেষকসহ মোট ২৬ জন গবেষক অংশ নিচ্ছেন। তারা উপকূলীয় থেকে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত ছোট আকারের পেলাজিক ও মেসোপেলাজিক মাছের প্রাচুর্য ও মজুত নিরূপণ করবেন। পাশাপাশি ইকোসিস্টেমের স্বাস্থ্যগত অবস্থা, গভীর ও আন্তর্জাতিক সমুদ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণের সম্ভাবনা এবং টেকসই আহরণের সীমা নির্ধারণে বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। জরিপকালে সমুদ্রের পানি স্তর ও কলামের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, ঘোলাভাব, পুষ্টি উপাদান, স্রোতের গতি ও দিকসহ নানা পরিবেশগত তথ্যও পরিমাপ করা হবে।
উপদেষ্টা জানান, মেসোপেলাজিক মাছ ও প্ল্যাঙ্কটন সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলের মূল ভিত্তি। তাই এদের জৈবভর, বৈচিত্র্য ও বিস্তার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এতে সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের স্বাস্থ্য এবং বাণিজ্যিক মাছের উৎপাদনশীলতা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব হবে।
গবেষণা জাহাজ আর ভি ড. ফ্রিডজোফ নানসেন প্রথমবার ১৯৭৯ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৮০ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জলসীমায় জরিপ পরিচালনা করে। এবারের অভিযানকে বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ফরিদা আখতার বলেন, এ জরিপ থেকে প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, টেকসই আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষায় নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে এ উদ্যোগ জাতীয় গবেষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার এবং প্রজাতি সংরক্ষণে বৈজ্ঞানিক মানচিত্র তৈরিতে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি, এ জরিপের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে, টেকসই মৎস্য আহরণের নতুন দিগন্ত তৈরি হবে এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় বৈজ্ঞানিক তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ হবে।”