ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো। ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে কলেজকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয়। এর ফলে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও সংঘাতের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে।
নিষিদ্ধ ঘোষণার এক বছরে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক স্লোগান, মিছিল ও পোস্টারের বদলে দেখা গেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও শিক্ষামূলক সেমিনারের আয়োজন। অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে এসেছে। আবার অনেকে মনে করছেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়ায় গণতান্ত্রিক চর্চা এবং নেতৃত্বের সুযোগ কমে গেছে।
২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, “ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রশাসনের সঙ্গে উপস্থাপন করতে নেতৃত্বের প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যায়, যেসব রাজনৈতিক ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেয়, এটা উচিত নয়।” সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বর্তমান পরিবেশ ভালো। কলেজ এখন সুন্দর ও স্বাভাবিক। ক্যাম্পাসে রাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই।”
মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ছাত্র রাজনীতি আমার পছন্দ না, তবে যদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় তা ঠিক আছে। তবে অতীতের মতো হলে আমরা প্রতিবাদ করব।” সাদিয়া আফরিন মৌ বলেন, “বর্তমান শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করে, মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে। আগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সম্ভব ছিল না। রাজনীতি করা সবার অধিকার হলেও তা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা নগর শাখার অর্থ সম্পাদক সুমাইয়া শাইনা বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য কায়েম করেছে। এতে সন্ত্রাস, সিট বাণিজ্য ও গেস্টরুম কালচার সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘটনা শিক্ষার্থীদের ভীতিকে পুঁজি করেছে। তবে ছাত্র রাজনীতির মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের অধিকারের সুরক্ষা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা।”
ইডেন কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি বলেন, “গত ১৭ বছরে ছাত্রলীগের একপক্ষীয় আধিপত্যে শিক্ষার পরিবেশ বিপন্ন হয়েছিল। বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে এক পক্ষ আধিপত্য স্থাপন করতে চাচ্ছে। তাই ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পদক্ষেপটি সঠিক নয়। যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে ওঠে ক্যাম্পাসের মাধ্যমে।”
ইডেন মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামছুন নাহার বলেন, “রাজনীতি নিষিদ্ধ বলতে দলীয় রাজনীতি বোঝানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে মত প্রকাশ করছে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এটি দলীয় প্রভাবমুক্ত হওয়া উচিত।”
গত এক বছরে ইডেন কলেজে রাজনৈতিক উত্তাপের পরিবর্তে সংস্কৃতি ও শিক্ষাচর্চার উষ্ণতা ফিরে এসেছে। কেউ মনে করছেন এটি শিক্ষার্থীদের মুক্ত শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, আবার কেউ বলছেন, নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক চর্চার পথ সংকুচিত হয়েছে। তবে একমত, শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চা, সৃজনশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।