“ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমি কোথায় যাব? কার কাছে যাব? এত ঋণ কীভাবে শোধ করব? আমাকে কেন এই নরকে একা রেখে গেল?”— কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন কথাই বলছিলেন টকি বালা দাস। সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোরে নগরের সিটি গেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামী অজিত দাসসহ পাঁচজন নিহত হন। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন টকি। সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের সামনে মরদেহের অপেক্ষায় বসে তিনি আহাজারি করছিলেন।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, ভোর পৌনে ৫টার দিকে সিটি গেটে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ডভ্যানের পেছনে একটি পিকআপভ্যান ধাক্কা দেয়। এতে অজিত দাসসহ পিকআপভ্যানে থাকা পাঁচজন নিহত হন। নিহতরা হলেন—অজিত দাস, আকাশ দাস, রনি দাস, জুয়েল দাস ও মো. সোহাগ। সোহাগ পিকআপভ্যানের চালক ছিলেন। জুয়েল রাতে ফৌজদারহাটের পূজা শেষে মামার বাড়ি যাচ্ছিলেন, অন্যরা মাছ কিনতে ফিশারিঘাটে যাচ্ছিলেন। আহত চারজনের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত অজিত, আকাশ ও রনির বাড়ি সীতাকুণ্ডের মধ্য সলিমপুর গ্রামের জেলেপাড়ায়। অজিতের তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে—বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে, ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং সবচেয়ে ছোট দুই বছর বয়সী। প্রতিদিন ফিশারিঘাট থেকে মাছ কিনে বিক্রি করতেন অজিত। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই তার স্ত্রী টকি বালা গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিনি জানালেন, সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ঘর করেছেন অজিত। এখন সেই ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন এবং সন্তানদের কীভাবে মানুষ করবেন, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পিকআপভ্যানটি ভোর ৫টায় ফৌজদারহাটের দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসছিল। সিটি গেটে সামনের গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কাভার্ডভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপভ্যান দুমড়ে-মুচড়ে যায়, চালকসহ তিনজন নিহত হন এবং ছয়জন আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।