নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামের আলেকজান বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, “দুর্ঘটনার আগের দিনই বাবা বলেছিলেন, এ মাসে ছেলেটা বাড়ি আসবে। কপাল খারাপ, ছেলেটা সত্যিই বাড়ি এলো, কিন্তু লাশ হয়ে। সড়ক আমার তিন কলিজার টুকরোকে কেড়ে নিল। এখন আমাকে মা বলে ডাকবে কে? দাদিকে বলবে কে? আল্লাহ! সংসারের সব সুখ শেষ হয়ে গেছে।”
গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের নাওজোড় এলাকায় কাভার্ডভ্যানের চাপায় প্রাণ হারান আলেকজান বেগমের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৩), তার স্ত্রী আঁখি আক্তার (২৬) ও দুই বছরের কন্যা আন্নি খাতুন। ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো মুকিমপুর গ্রাম।
আনোয়ারের বাবা খলিল হোসেন বারবার বলছিলেন, “আমার ছেলে সংসার নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতো। এখন আমাকে কে বাবা বলে ডাকবে? আর আমার ফুটফুটে নাতনিও দাদা বলে দৌড়াবে না। সংসারের ভরসা ছিল আনোয়ার, সেই ভরসা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল।” কথা বলতে বলতে তিনি অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ার ময়মনসিংহের আরএফএল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মঙ্গলবার সকালে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি আশুলিয়ায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় রওনা হন। গাজীপুরের নাওজোড় এলাকায় পৌঁছালে অটোরিকশার পেছনের চাকা খুলে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। শিশু আন্নি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গুরুতর আহত আনোয়ার ও আঁখিকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদেরও মৃত্যু হয়।
নিহতদের মরদেহ প্রথমে ঢাকার আশুলিয়ায় নেওয়া হয়। রাতে জানাজা শেষে ভোরে মুকিমপুর গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ১০টায় তাদের তিনজনকে পাশাপাশি গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক নিশ্চিত করেছেন, দুর্ঘটনাকবলিত কাভার্ডভ্যান ও অটোরিকশা গাজীপুরের বাসন থানার পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।