ভারতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জন্য নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার শিগগিরই সংসদে একটি সংবিধান সংশোধনী বিল উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। এই বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী যদি গুরুতর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তাহলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার পদ হারাবেন।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বুধবার (২০ আগস্ট) জানানো হয়েছে, আগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সংসদে এই বিলটি উপস্থাপন করবে এবং পরে এটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হতে পারে।
প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী সংবিধানের ২৩৯এ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হবে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, কোনো মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী যদি পাঁচ বছর বা তার বেশি শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে অন্তত ৩০ দিন জেলে থাকেন, তবে তার পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। তিনি যদি নিজে পদত্যাগ না করেন, তবুও ৩০ দিনের পরে পদ থেকে অপসারিত হবেন। এই নিয়ম প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে মুক্তি পাওয়ার পর তারা পুনরায় পদে আসীন হতে পারবেন।
ভারতে অতীতের রাজনৈতিক প্রথা অনুযায়ী, গুরুতর অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে সাধারণত মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা পদত্যাগ করে থাকেন। যেমন—লালুপ্রসাদ যাদব, জয়ললিতা ও হেমন্ত সোরেনের ক্ষেত্রে এটি দেখা গেছে। তবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আবগারি কেলেঙ্কারি মামলায় ছয় মাস কারাগারে থাকলেও তখন পদে বহাল ছিলেন। পরে তিনি পদত্যাগ করেন।
ভারতের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী এখনও পদে থাকাকালীন জেলে যাননি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও অবশ্য পদত্যাগের পর দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হন, পরে সুপ্রিম কোর্ট তার অভিযোগমুক্তি দেন।
নতুন বিল নিয়ে ইতোমধ্যেই বিরোধী দলগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল বুধবার বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করেছে। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য ও কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতি নেই। বিরোধী নেতাদের রাজনৈতিক কারণে হেনস্তা করা হয়। এই আইনের ফলে কেন্দ্রীয় সরকার সহজেই যে কোনো বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীকে ৩০ দিনের জন্য গ্রেপ্তার করিয়ে পদচ্যুত করতে পারবে, কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের মুখ্যমন্ত্রীকে কখনো এভাবে গ্রেপ্তার করা হবে না।