হজরত নূহ আলাইহিস সালামকে “আদমে সানী” বা দ্বিতীয় মানব বলা হয়। তার সম্প্রদায়ের খোদাদ্রোহীতা ও সত্য পথ থেকে বিচ্যুতির কারণে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর বন্যা প্রেরণ করেন। এই বন্যায় মাত্র অল্প সংখ্যক মানুষ বেঁচে যান, যারা পরবর্তীতে মানবজাতির পুনঃপ্রসার ঘটান। এজন্য নূহ (আ.)-কে আদমে সানী হিসেবে খ্যাতি লাভ।
নূহ (আ.) দীর্ঘায়ু ছিলেন এবং প্রায় হাজার বছর ধরে মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করার আহ্বান জানাতেন। কিন্তু তার সম্প্রদায়ের লোকজন নবীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তাকে নির্যাতন করত। কখনো পাথর মারা হতো, কখনো অন্যান্য পদ্ধতিতে আঘাত হতো। এই সব আঘাতেও নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, “হে আমার রব! আমার জাতিকে ক্ষমা করুন, তারা অজ্ঞ এবং অজ্ঞাত।”
সদা ধৈর্যশীল নূহ (আ.) এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মকে আসমানী ধর্মের দিকে আহ্বান করে গেছেন, শুধু এই আশায় যে হয়তো ভবিষ্যতের কেউ ঈমান আনবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় চেষ্টা সত্ত্বেও তার সম্প্রদায় আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেনি।
শেষ পর্যন্ত নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। পবিত্র কোরআনে এই প্রার্থনার উল্লেখ আছে:
قَالَ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ بِمَا كَذَّبُوۡنِ
অর্থাৎ, “হে আমার রব! আমাকে সাহায্য করুন, কারণ তারা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে।” (সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত : ২৬)
আল্লাহ তায়ালা নূহ (আ.)-এর দোয়া কবুল করলেন এবং তাকে নৌকা তৈরি করার নির্দেশ দিলেন। নৌকা প্রস্তুত হওয়ার পর পৃথিবীতে ব্যাপক প্লাবন ঘটে। আসমান থেকে মুষলধারে বৃষ্টি নামে এবং ভূমি থেকে পানি উত্থিত হয়।
নৌকায় নূহ (আ.) ঈমানদার মানুষ এবং জোড়া জোড়া প্রাণী নিয়ে উঠেন। এই প্লাবনে নৌকার আরোহী ছাড়া পৃথিবীর সব প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায়। বন্যা শেষ হলে আল্লাহর নির্দেশে পানি শুষে যায় এবং ঈমানদারদের মাধ্যমে মানবজাতি পুনরায় পৃথিবীতে বিস্তৃত হয়।