২১ আগস্ট ২০২৪, ফেনীর পরশুরাম উপজেলার ধনীকুন্ডা এলাকার নাহিদা সুলতানা সেই ভয়াবহ দিনটির কথা এখনও ভুলতে পারেননি। তার ঘরে তখন এক গলা পানি, পরিবারের ছোট সন্তান ও বৃদ্ধ শ্বাশুড়ি নিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রতিবেশীর ছাদের ওপর। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে দুই দিন পার করেছেন বিপাকে। তিনি বলেন, “প্রতিবছর নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবন দেখা যায়, কিন্তু সেদিনের পানির তীব্র স্রোত সবকিছুকে হার মানিয়েছে। এখনো মাঝে মাঝে রাতে সেই দৃশ্য স্বপ্নে দেখতে পাই।”
ফুলগাজীর ঘনিয়ামোড়া এলাকার নুরুল ইসলাম জানান, বন্যার সঙ্গে অভ্যস্ত হলেও ২০২৪ সালের তা ভয়াবহ ছিল। “উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েও বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে আমরা বিপাকে পড়েছিলাম।”
ফেনী সদরের ফাজিলপুর ইউনিয়নের আব্দুল কাদের বলেন, “গত বন্যায় ঘর ভেঙে গেছে, বাঁশ-টিন দিয়ে মেরামত করেছি। বৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে যায়। সরকার ঘর নির্মাণের কথা বলেছে, কিন্তু এখনও কিছু হয়নি।”
২০২৪ সালের বন্যায় ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে তিন উপজেলার লোকালয় প্লাবিত হয়। এতে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যায় ২৯ জনের মৃত্যু ঘটে এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। উদ্ধার ও সহায়তায় অংশ নেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি।
২০২৫ সালের সাম্প্রতিক বন্যাতেও নদী নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন থেকে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজকে দায়সারাহীন মনে করছেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের বন্যায় ১,৭১৮টি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মধ্যে সরকারিভাবে মাত্র ১১০টি ঘর নির্মাণ হয়েছে, যা মোট চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ। ফলে ৯৫ শতাংশ পরিবার এখনো নতুন ঘরের অপেক্ষায়।
ফেনী স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগের সদস্য আসাদুজ্জামান দারা বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন না হওয়ায় সরকার উদাসীন। আমরা কিছু কাজ করেছি, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। সরকারের উচিত ছিল মানুষকে স্বাবলম্বী করতে সহায়তা করা।”
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, “সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কিছু ঘর নির্মাণ ও সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ এলে কাজ করা সম্ভব।”